অন্যান্য মূল্যবান ধাতুও মিলতে পারে হিলিতে

39

প্রায় দুই মাস খনন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর দিনাজপুরের হিলিতে লোহার খনি থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ ভূতাত্তি¡ক জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)। তবে এখানে ঠিক কি পরিমাণ লোহা আছে তা জানতে আরও অন্তত ৫-৭টি ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা আরও জানান, এখানে লোহার পাশাপাশি কপার, ক্রোমিয়াম ও নিকেলের মতো মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি ধরা পড়েছে। তবে এর জন্যও আরও খনন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামে প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা নিয়ে খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ড্রিলিং কার্যক্রম চালাচ্ছে জিএসবি। তিনটি শিফটে দিনরাত কাজ করছেন ৩০ সদস্যের একটি দল। জিএসবি’র উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘এখানে খনন কার্যক্রমে ১৩’শ ফুট গভীরতায় লৌহের আকরিকের সন্ধান পেয়েছি আমরা। ল্যাব এনালাইসিস করে আমরা বুঝতে পেরেছি, এখানে লোহার তিনটি আকরিক আছে। ম্যাগনেটাইট, হেমাটাইট, সিনেরাইটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখানে সবচেয়ে উন্নতমানের যে নমুনা পাওয়া গেছে তার মধ্যে ম্যাগনেটাইট আকরিকের উপস্থিতি ৭২ ভাগের ওপরে। আমরা সাব সার্ফেস থেকে যে নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছি, সেগুলো পরীক্ষা করে উন্নতমানের লোহার আকরিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে’।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘১৩’শ ফুট থেকে শুরু করে ১৭’শ ৫০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় ৪’শ ফুটের ওপরে লোহার আকরিকের থিকনেস পেয়েছি। এটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম। আমরা আশা করছি, এর ব্যাপ্তি ৫-১০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যেও যদি হয়, তাহলে বিশ্বের প্রধান পাঁচটি ভূগর্ভস্থ খনির মধ্যে এটা স্থান করে নিতে পারে’।’ খবর বাংলা ট্রিবিউনের
হিলিতে পাওয়া ভূগর্ভস্থ নমুনা পরীক্ষা করে সেখানে আরও কয়েকটি মূল্যবান ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলেও জানান জিএসবি’র উপপরিচালক। তিনি বলেন, ‘এগুলো আয়রণের সঙ্গে বোনাস। এখানে মূল্যবান ধাতু কপারের উপস্থিতি রয়েছে, ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে, এছাড়াও নিকেলের উপস্থিতিও এখানে আছে। এগুলোর পুরো পিকচারটা পেতে হলে এই ৫-১০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে আরও কয়েকটা কূপ খনন করবো। তবে এ পর্যন্ত যতটুকু খনন কার্যক্রম চালিয়েছি এবং যতটুকু পেয়েছি সেটা আশাব্যঞ্জক। সেটা দেশ ও জাতির জন্য শুভ সংবাদ বয়ে আনবে বলে আমরা আশা করছি।’
জিএসবি’র ড্রিলিং প্রকৌশল উপপরিচালক মাসুদ রানা বলেন, ‘হিলির ইশবপুরে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ধাতব খনিজ সম্পদের মজুদ, বিস্তৃতি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ড্রিলিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি আমরা। এই খনন কার্যক্রমে আমরা ১৩৩৪ ফুট গভীরতা থেকে লোহার আকরিকের সন্ধান পেয়েছি, এখন পর্যন্ত আমাদের ১৭৮৬ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৩৪ ফুট থেকে ১৭৮৬ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন গভীরতায় এখানে লোহার আকরিক পাচ্ছি। এখানে কি পরিমাণ মজুত আছে সেটি জানার জন্য আরও ৫-৭টি এরকম ড্রিলিং করতে হবে। তার আগে মজুতের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। শুধু কি আছে বা কতটুকু পুরুত্বে আছে সেটিই বলা যাচ্ছে। এখানে যে পরিমাণ লোহার আকরিকের সন্ধান আমরা পেয়েছি এটা যদি অর্থনৈতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি। জুনের পর নতুন অর্থবছরে আমরা খনির রিজার্ভ ও আকার বের করার জন্য নতুন করে কাজ শুরু করতে পারবো’।
তিনি জানান, এখানে কোনো স্বর্ণের সন্ধান মেলেনি। কিছু সংবাদ মাধ্যমে এ সম্পর্কিত ভুল খবর প্রচার করেছে।