বিভাস গুহ
১০ জানুয়ারি ছিল স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয়মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি বিজয় অর্জন করলেও স্বাধীনতার মহানায়ককে ছাড়া সে বিজয়ের পূর্ণতার ঘাটতি ছিল। বঙ্গ মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান দেশে ফিরে আসার পরই বিজয়ের পূর্ণতা লাভ করে।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমে লন্ডন পরে দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৯ জানুয়ারি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। লন্ডন থেকে ঢাকা আসার পথে দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন। বিমানবন্দরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি. ভি. গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানান। ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করেন।
বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করে আবেগে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কিনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে, বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও বাঙালি জাতির ভালবাসার ঋণ আমি শোধ করে যাব।’ লাখো মানুষের সামনে দেয়া কথা রেখেছেন স্বাধীনতার মহানায়ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্রের বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার মাটি। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় ‘তোমার বক্ষ বিদীর্ণ করে হাজার পাখির ঝাঁক/ পাখা মেলে উড়ে গেল বেহেস্তের দিকে…।’ রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির ভালবাসার ঋণ শোধ করে গেলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পুনরায় আলোর পথকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিল।
সূর্যকে মেঘ ঢেকে রাখলেও ক্ষণিক পরে সে মেঘ কেটে গিয়ে যেমন পুনরায় সূর্যের আলোয় অন্ধকার দূরীভূত হয় ঠিক তেমনি ১৯৭৫ এ যে সূর্যকে অন্ধকার ঢেকে দিয়েছিল সে অন্ধকারকে দূর করে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সূর্যের আলোয় আবারও দেশকে আলোকিত করেছে। পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয় ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।