অন্তর্কলহের বলি ইভান

27

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর চেরাগী মোড়-জামালখান-মোমিন রোড-আন্দরকিল্লা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই শীর্ষ নেতার অনুসারী ছাত্রলীগের বিবদমান দুটি উপ-গ্রুপের মধ্যে অন্তর্কলহের বলি হয়েছেন এক পক্ষের নেতা আসকার বিন তারেক (১৮) ওরফে ইভান। ঘটনার সাড়ে চার মাস পর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত টিপছোরাসহ গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। আজ রবিবার আদালতে ওই তিন আসামির রিমান্ড আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে চেরাগীপাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইভান হত্যা মামলার তিন আসামি সজীব নাথ (১৯), সৌভিক পাল (২০) ও মো. শাখাওয়াত হোসেন (২০) কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা তিনজনই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে সজীব নাথের দেয়া তথ্যে জামালখান বাই লেনের নালার ভেতর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত টিপছোরা জব্দ করা হয়েছে। রবিবার (আজ) আদালতে তাদের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হতে পারে।
পুলিশ জানায়, ইভান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২২ এপ্রিল হত্যাকান্ডের পর রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় এজাহারভুক্ত এক নম্বর আসামি শোভন দেবকে। এর পাঁচদিন পর ২৭ এপ্রিল নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মোড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক আসামি প্রিয়ম বিশ্বাসকে। আর গত ১০ মে লোহাগাড়ার উত্তর আমিরাবাদ মজুমদার পাড়া থেকে আসামি সৌরভ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন এদের মধ্যে একজন ইভানকে রাজাপুর লেনের ভেতরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। অন্যরা তাকে চেপে ধরে কিলঘুষি মারে। এক পর্যায়ে রক্তাক্ত অবস্থায় নেতিয়ে পড়া ইভানকে গলির ভেতর থেকে ব্যস্ততম চেরাগী মোড়ের কাছে সড়কের উপর টেনে এনে লোকজনের সামনে ইচ্ছেমত পিটিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ইভান পরিবারের সাথে নগরীর এনায়েতবাজার এলাকায় থাকতেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পরিচয় দেয়া রহমতগঞ্জের বাসিন্দা সাব্বির সাদেকের অনুসারীদের মধ্যে জামালখান- চেরাগী মোড়- মোমিন রোড-আন্দরকিল্লাসহ আশপাশের এলাকায় ভাসমান দোকানে চাঁদাবাজি ও আড্ডার জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে দু’পক্ষের সশস্ত্র সংঘাতের বলি হয়েছেন আসকার বিন তারেক ওরফে ইভান। ইভান ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পরিচয় দেয়া সাব্বিরের সাদেকের অনুসারী। আর ইভান হত্যা মামলার আসামিরা কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তবে শৈবাল দাশ সুমনের দাবি, তার কোনও অনুসারী নেই। উভয় গ্রুপকেই আবার নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার অনুসারী হিসেবে রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে। একই শীর্ষ নেতার অনুসারী বিবদমান দুই উপ-গ্রুপের মধ্যে গত ২০ এপ্রিল প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। ওই দিন কাজীর দেউড়ি এলাকায় ধ্রæব নামের এক তরুণকে একা পেয়ে মারধর করেন আসকার বিন তারেক ওরফে ইভান ও তার বন্ধুরা। এর জের ধরে দু’দিন পর গত ২২ এপ্রিল ইফতার শেষে চেরাগী মোড়ে ইভানের বন্ধু অমিতকে একা পেয়ে মারধর করেন ধ্রæব ও তার বন্ধুরা। বিষয়টি জানার পর ইভান কয়েকজনকে নিয়ে চেরাগী মোড়ে আসেন। সেখান থেকে আন্দরকিল্লা মোড়ে গেলে দু’পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর ইভান পুনরায় চেরাগী মোড়ে এসে রাজাপুর লেনের ভেতরে ঢুকলে দয়াময়ী ভবনের সামনে প্রতিপক্ষ তাকে ঘিরে ফেলে। সেখানেই তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হানপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২২ এপ্রিল নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি থেকে মারামারির পর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এর জের ধরে ওইদিন রাত নয়টার দিকে আবার চেরাগী পাহাড় মোড়ে উভয় গ্রুপের কয়েকজন ফের সংঘাতে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে আসকার বিন তারেক ওরফে ইভানকে রাজাপুর লেন গলির ভেতরে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মারাত্মক জখম হয়ে নিহত হন। পরদিন তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক বাদী হয়ে আট জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।