অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে সিএমএম’র তদন্ত কমিটি

31

চট্টগ্রাম মেট্রো আদালতের হাজতখানায় অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতের তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে হাজতখানায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ১১টি সুপারিশও করেছে কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনে মেট্রো আদালতের হাজতখানায় দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের নির্দিষ্ট সময় পর পর বদলির সুপারিশও করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি। আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- হাজতখানায় কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য অর্থের বিনিময়ে হাজতিদের সঙ্গে দর্শনার্থীদের দেখা করতে দেয়া, খাবার সরবরাহ করা, কম হাজতি বিশিষ্ট কক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় হাজতি রাখা, ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া এবং আদালত ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার খালি কক্ষে বিশেষ সুবিধা দিয়ে কোনো কোনো হাজতিকে দর্শণার্থীদের সাথে দেখা করতে দেয়ার ঘটনার সাথে জড়িত।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- ভুক্তভোগীরা কোনো নির্দিষ্ট পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ না করায় এবং দায়িত্বপালনকালে অর্থগ্রহণকারী পুলিশ সদস্যরা তাদের বুকে থাকা নাম সম্বলিত ব্যাজ পরিধান না করায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
কমিটির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে মেট্রো আদালতের হাজতখানায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- দীর্ঘদিন যাবত যে সকল পুলিশ সদস্য হাজতখানায় দায়িত্ব পালন করছেন তাদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলি করা, হাজতখানার ভেতর ও বাহির সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা, হাজতখানায় নিবন্ধিত আইনজীবী ছাড়া দর্শণার্থীর প্রবেশ বন্ধ করা, হাজতখানাকেন্দ্রিক টাউট চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, পুরুষ হাজতখানার কক্ষ বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি কক্ষে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, হাজতখানায় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, হাজতখানায় দায়িত্বরত সকল পুলিশ সদস্যদের বুকে নাম সম্বলিত ব্যাজ পরা নিশ্চিত করা, কারাগার থেকে যেসব আসামিকে আদালতে আনা হয় তাদের দুপুরের খাবার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা এবং হাজতিদের আবশ্যিকভাবে হাজতখানা থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতে প্রেরণ করা।
তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ। খবর বাংলানিউজের
অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি হাজতখানায় অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে একজন সাংবাদিক, আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আদালতের প্রসিকিউশন শাখার দায়িত্বরত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, সহকারী কমিশনার, হাজতখানার ইনচার্জ, মূল অভিযুক্ত এসআই শাহজাহান ও চার আসামিসহ মোট ১৩ জনের জবানবন্দি নেয়।
গত ১০ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম আদালতের নিচতলায় মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজতখানার অপকর্ম নিয়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘চট্টগ্রাম মেট্রো আদালতের হাজতখানায় যা হয়’ শিরোনামে ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
১০ জুলাই বিকেলেই চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখার হাজতখানায় কর্মরত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান ও কনস্টেবল হান্নানকে ক্লোজড করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
এ ঘটনা তদন্তে ১০ জুলাই বিকেলেই নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। কমিটিতে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সিটি এসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদকে সদস্য সচিব ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে। সিএমপির তদন্ত কমিটি এখনও তদন্ত করছে। শিঘ্রই এ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে।
১১ জুলাই মেট্রো আদালতের হাজতখানায় অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরও তদন্ত কমিটি গঠন করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গনির আদালত। কমিটিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানকে সদস্য সচিব ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানকে সদস্য করা হয়। কমিটি গঠনের ২০ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এ কমিটি।