অনলাইনে ৬৪ শতাংশ নারী সহিংসতা-হয়রানির শিকার

21

পূর্বদেশ ডেস্ক

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ২০২২ সালে করা এক সমীক্ষা অনুসারে, ৬৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী উত্তরদাতারা বলেছেন তারা অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন, গত বছরে যা ছিল ৫০ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১শ জনের মধ্যে ৬৪ জন নারী অনলাইন হয়রানি ও সহিংসতার সম্মুখীন হতে হয়। দেশে অনলাইন সহিংসতার হার জানার জন্য অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
এ সমীক্ষাটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীদের অনুভ‚ত বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা এবং হয়রানি চিহ্নিত করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং এর পেছনের মূল কারণ এবং অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়ে সচেতনতার জন্য বিভিন্ন পন্থা উপস্থাপন করে।
১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল রবিবার ব্র্যাক সেন্টার ইন এ অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা: বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাট এই ৬টি জেলায় একটি অনলাইন জরিপের মাধ্যমে এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়, যেখানে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারী অংশ নেন।
সমীক্ষায় বলা হয়, ২০২২ সালে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নারীরা বেশিরভাগই ফেসবুকে (৪৭.৬০%), মেসেঞ্জারে (৩৫.৩৭%), ইনস্টাগ্রামে (৬.১১%), ইমোতে (৩.০৬%), হোয়াটসঅ্যাপে (১.৭৫%) এবং ইউটিউবে (১.৩১%) অনলাইন সহিংসতার সম্মুখীন হয়। ‘অন্যান্য মাধ্যমে ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী বলেছেন তারা ভিডিও কল, মোবাইলফোন এবং এসএমএসের মাধ্যমে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
এই বছরের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য এবং আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী ইনবক্সে যৌনতাপূর্ণ ছবি গ্রহণ এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব, ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্য এর শিকার হয়েছেন।
১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতারা বলেছেন যে- তাদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি তৈরির ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন, ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বলেছেন যে তাদের কার্যকলাপ সবসময় সাইবারে অনুসরণ করা হয় এবং ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন, ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বলেছেন তাদেরও ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন।
৩ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতাদের মতে, যৌন নিপীড়নের সময় তাদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছিল। ২ দশমিক ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপনে পোস্ট করা হয় এবং পরে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়ে অর্থের জন্য বø্যাকমেইল করা হয়। ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের ছবি সম্পাদনা করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়। খবর বাংলানিউজের
সমীক্ষা মতে, অনলাইন সহিংসতার কারণে নারীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব হলো মানসিক আঘাত, হতাশা এবং উদ্বেগ (৬৫.০৭%), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রভাব হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা বা মতামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আস্থা হারানো (৪২.৭৯%)। ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন।
সমীক্ষায় আরও প্রকাশ করা হয়েছে যে, অনলাইন সহিংসতা এবং হয়রানির কারণে সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা নারীর আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে সংকুচিত করছে।
সমীক্ষায় আরও বলা হয়, ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং ৮৫ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগ জমা না দিয়ে নীরব ছিলেন যদিও তারা বিভিন্ন উপায়ে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন।