অনলাইনে প্রতারণায় শীর্ষে ই-কমার্স ও এমএলএম

19

পূর্বদেশ ডেস্ক

মা ছিলেন কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা। অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের ৮০ লাখ টাকা ছিল ছেলে আজাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। মায়ের অনুমতি নিয়ে সেই টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা আজাদ বিনিয়োগ করেছিলেন একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। তিন লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। পরে মা-বাবাকে না জানিয়েই পুরো ৮০ লাখ টাকাই বিনিয়োগ করেন আলিফ ওয়ার্ল্ড নামের আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে। এর বাইরে কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে এবং কয়েকজনকে লাভ-ক্ষতির ভাগাভাগির সঙ্গী করে সফেটিক নামে আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন আরও প্রায় এক কোটি টাকা।
বিনিয়োগের পর লাভ হওয়া তো দূরের কথা, আজাদসহ সব গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছে আলিফ ওয়ার্ল্ড ও সফেটিক। নিজের পরিবার ও বন্ধুদেরসহ প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আজাদ। ঘটনাটি ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ের। এরপর প্রায় আড়াই বছর কেটে গেছে। এক টাকাও ফেরত পাননি তিনি। ১০ লাখ টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে, সেটিও তুলতে পারেননি এই আড়াই বছরে।
আজাদ বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা নিয়ে প্রথম দিকে সরকার বা প্রশাসন সরগরম থাকলেও এখন সবাই চুপ।ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কেউ কেউ বিভিন্ন মামলায় ধরা খেয়ে কারাগারে বা জামিনে বের হয়ে আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গিয়ে মৌজমাস্তি করছেন। কিন্তু যারা প্রতারণার শিকার হয়েছে তাদের অবস্থাটা বলে বোঝানো কঠিন’।
আজাদ বলেন, ‘আমার মায়ের পেনশনের টাকা দিয়ে একটা বাড়ি করার কথা ছিল। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম যদি বিনিয়োগ করে কিছু লাভ করতে পারি, তাহলে ক্ষতি তো নেই। কিন্তু এখন আমি পরিবার-স্বজন-বন্ধুদের সামনে মুখ দেখাতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে দফতরে ঘুরছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবাই গা-ঝাড়া দিয়ে বসে আছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারক মালিকরা গ্রাহকের টাকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে আরাম-আয়েশে দিনযাপন করছে। আর আমি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বন্ধুদের দেনা শোধ করে যাচ্ছি’। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
শুধু আজাদই নয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন এমন শত শত তরুণ। সরকারের নানা উচ্চবাচ্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আইন প্রয়োগের হুঙ্কার, সবকিছুই যেন অসাড়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
অনলাইনে লোভনীয় ফাঁদ
তিন থেকে ছয় মাসেই বিনিয়োগের টাকা দ্বিগুণ হবে কিংবা বিশেষ ছাড়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে দেওয়া হচ্ছে পণ্য- এরকম লোভনীয় অফার দেওয়া হয় অনলাইনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, নিজস্ব ওয়েবসাইট বা নানা অ্যাপ ব্যবহার করে চলে এরকম প্রচারণা। প্রলোভনে পড়ে প্রতারকদের ফাঁদে পা বাড়ান সরল মনের অনেকেই। প্রথম দিকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। অর্ধেক দামে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ঘরে। এরপর সেই গ্রাহকদের দিয়েই প্রচারণা শুরু করে প্রতারক চক্রগুলো।
‘ব্যবসা’ জমজমাট হয়ে গেলেই শুরু হয় টালবাহানা। বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতে ধরনা দিতে হয় গ্রাহকদের। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায় না অর্ধেক দামের সেই পণ্য। এর মাঝে চম্পট দেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, একসময়ে যুবক, ডেসটিনি বা ইউনিপেটুইউ নামে এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি সাধারণ মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রতারকরা কৌশল পাল্টেছে। সারা দুনিয়ায় ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এখানে প্রতারক চক্রগুলো ই-কমার্সের নামে প্রতারণা শুরু করেছে। আর পিরামিড স্কিম বা এমএলএমের নামেও প্রতারণা চলছে অনলাইনে। বিভিন্ন অ্যাপ বানিয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা।
শীর্ষে ই-কমার্স ও এমএলএম কোম্পানি
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে প্রতারণায় শীর্ষে রয়েছে ই-কমার্স ও এমএলএম কোম্পানি। করোনার সময় প্রথম ই-কমার্সের নামে প্রতারণার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির প্রতারণা নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর একে একে ধামাকা শপিং, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডট কম, কিউকম, রিংআইডি, দালাল প্লাস, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, মাইক্রোট্রেড, র‌্যাপিড ক্যাশ, নিরাপদ শপ, আলিফ ওয়ার্ল্ড, জিকো বাজার গেøাবাল গেইন, এমাসবিডি, আনন্দবাজার, ২৪টিকিট, ফাল্গুন শপবিডিসহ শতাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার পাশাপাশি অনেকগুলোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের কাজ হলো মামলার তদন্ত শেষে তথ্য-প্রমাণসহ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া। গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আদালত বা সরকারের অন্য সংস্থা করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-কমার্সের পাশাপাশি অনুমোদন ছাড়াই এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল বেশ কয়েকটি প্রতারক চক্র। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ) নামে একটি অ্যাপভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি সারা দেশের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। একসময় যুবক, ডেসটিনি, নিউওয়ে বা ইউনিপেটুইউ এমএলএম কোম্পানিগুলো মানুষের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছিল। এখন অ্যাপভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রতারণা করা হচ্ছে।
সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, ‘যারা প্রতারণা করে গাড়ি-বাড়ি করেছে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তাদের নামে মানিলন্ডারিং মামলা হচ্ছে। তাদের সম্পদ ও ব্যাংক লেনদেন ফ্রিজ করা হচ্ছে। যারা প্রতারণা করে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের কাউকেই আমরা ছাড় দেবো না।’
নিঃস্ব হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা
২০০৬ সালে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এরপর ডেসটিনিতেও টাকা রেখে ফেরত পাননি কেউ। এ ঘটনা জেনেও ইউনিপেটুইউ নামের প্রতিষ্ঠানের একই ধরনের জালে আটকা পড়েন বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রতারণার ঘটনাগুলো নিয়ে সরকার বহুবার তদন্ত করেছে, কমিশন গঠন করেছে, টাকা ফেরতের পথও দেখিয়েছে। মামলাও হয়েছে অনেক। কিন্তু প্রতারিত গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাননি।
দিনাজপুরের বাসিন্দা মজনু নামে এক ব্যক্তি একসময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। ডেসটিনিতে বিনিয়োগ করেছিলেন তিনি। চাকরি ছেড়ে নিয়মিতভাবে ডেসটিনিতে বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করতেন তিনি। কারণ তার হাত ধরে যত বিনিয়োগ হবে তত বেশি কমিশন পাবেন তিনি। এভাবে কিছুদিন লভ্যাংশও তুলেছেন। কিন্তু এক পর্যায়ে ডেসটিনির প্রতারণার বিষয়টি সামনে এলে তার হাত ধরে বিনিয়োগ করা ব্যক্তিরা তাকে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে গ্রামের জমি বিক্রি করে কিছু মানুষের বিনিয়োগ ফেরত দিয়েছেন। এখন গ্রামে গিয়ে মুদি দোকান করেন। মজনু বলেন, এসব কথা আর মনে করে লাভ নেই। ডেসটিনি আমার জীবনটাই ধ্বংস করে দিয়েছে। বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাবো- এটা এখন আর কল্পনাও করি না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগে ই-কমার্সের বিনিয়োগ করে যারা প্রতারিত হয়েছেন তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার সুযোগ কম। ২০২১ সালের পরে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু বলেন, ‘আমাকে বিষয়টি এখনও কেউ জানায়নি। কোনো মিটিংয়েও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়নি। ফলে এটি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আগে থেকেই যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাই করা হবে। এছাড়া ইস্যুটা আমাকে আগে জানতে হবে। তারপর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না সে সম্পর্কে বলতে পারবো’।

বিদেশে প্রতারকদের আয়েশি জীবন
ই-কমার্স বা এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিদেশে বসে আয়েশি জীবন পার করছেন। ই-অরেঞ্জ নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নেপথ্যে ছিলেন রাজধানীর বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা। প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পর তিনি পুলিশের চাকরিতে থাকা অবস্থায়ই পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের পর বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন। ভারতীয় জেলে কিছুদিন থাকার পর জামিনে বের হয়ে নেপাল হয়ে এখন তিনি রোমানিয়ায় বসবাস করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ই-অরেঞ্জের নামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন সোহেল রানা। সেই টাকা দিয়ে রোমানিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও তার বোন ই-অরেঞ্জের চেয়ারম্যান সোনিয়া মাহজাবীন এখন কারাগারে বন্দি আছেন। কিন্তু প্রতারণার টাকায় ইউরোপে বিলাসী জীবনযাপন করছেন সোহেল রানা।
সফিটেক ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজুল হক সানি স্ত্রীসহ দুবাই অবস্থান করছেন। মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) পরিচালিত হতো বিদেশ থেকে। বাংলাদেশের কুমিল্লার বাসিন্দা মাসুদ আল ইসলাম দুবাই বসে অ্যাপভিত্তিক পঞ্জি স্কিমের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দুবাইয়ে বসে আয়েশি জীবনযাপন করছেন তিনি।
আলিফ ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার রাশেদুল ইসলাম নয়ন দুবাই অবস্থান করছেন। আনন্দবাজারের কর্ণধার এএইচ খন্দকার মিঠু গ্রাহকদের সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান দুবাইয়ে। ই-কমার্স থলে ডটকমের মালিক সাকিবও অবস্থান করছেন দুবাইয়ে। ধামাকার এমডি জসিম উদ্দিন চিশতি গ্রাহকদের প্রায় শত কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এমএলএম বা ই-কমার্স প্রতারণার সঙ্গে জড়িত যারা বিদেশে পলাতক রয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মাসুদ আল ইসলাম, শেখ সোহেল রানাসহ সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

প্রতিরোধে সমন্বয়হীনতা, টাস্কফোর্সও অকার্যকর
অনলাইনে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে একটি টাস্কফোর্স রয়েছে। কিন্তু সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। গত বছরের আগস্ট মাসে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণার বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৎকালীন সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে অনলাইনে সংঘটিত আর্থিক প্রতারণার ধরন, অবৈধ আর্থিক লেনদেনের জন্য ভুয়া ফিন্যান্সিয়াল ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসের ব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জুয়া বা বেটিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে প্ররোচিত করা, অনলাইনের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়া ও মোবাইল ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভুয়া অ্যাকাউন্টধারীর নামে এমএফএস অ্যাকাউন্টের ব্যবহার, অনলাইনের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতা, বিটিআরসির দায়িত্ব ও সক্ষমতা, অনলাইনের মাধ্যমে অবৈধ আর্থিক লেনদেন বন্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অনলাইনে ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কারা দেখভাল করবেন তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা একে অপরের ওপর দায় চাপান। সর্বশেষ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই) ১১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর প্রথমে কেউ এর দায় নিতে চাননি। পরে অবশ্য একাধিক ভুক্তভোগী মামলা দায়ের করলে তার তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি বিআইএফইউ নিয়মিত নজরদারি করে। প্রতিমাসেই শতাধিক প্রতিবেদন বা অপরাধ বা অপরাধীদের তথ্য-উপাত্ত বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়। এর পরের ধাপের কাজ আসলে অন্য সংস্থার। কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ বন্ধ বা কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই বিএফআইইউ’র। ফলে এটি সমন্বিতভাবে না করলে অনলাইন স্ক্যাম বন্ধ করা যাবে না।
বিএফআইইউ’র ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নজরদারির পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে নিয়মিত চিঠি পাঠাই। গোয়েন্দা নজরদারি ও আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে না পারলে এটি বন্ধ করা যাবে না’।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অনলাইন স্ক্যাম বন্ধ করতে না পারার জন্য একক কোনো সংস্থাকে দায়ী করা যাবে না। প্রত্যেক সংস্থাকে এক হয়ে কাজ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আইসিটি বিভাগ এককভাবে বা সরকার চাইলেই বন্ধ করতে পারবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই একযোগে কাজ করলে সাইবার স্পেস বা অনলাইন নিরাপদ করা যাবে’।