অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুয়া : জীবন ও কর্ম

24

ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো

প্রাথমিক জীবন : অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুয়া পটিয়া উপজেলার অর্ন্তগত পিঙ্গলা গ্রামে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গৌর কিশোর বড়ুয়া এবং মাতার নাম সরসী বালা বড়ুুয়া। বাল্যবয়সে তিনি পিতৃহারা হন এবং পিতৃব্য হরকিশোর বড়ুয়ার তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হন। গ্রামের পাঠশালায় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন : ছাত্র জীবনে কৃতিত্বের অধিকারী প্রমোদ রঞ্জন ১৯৩৫ সালে পরৈকোরা নয়নতারা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই.এ. পাস করেন। ১৯৩৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি.এ. অনার্স পাস করেন। অত:পর প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। এম.এ পরীক্ষায় অনন্য কৃতিত্বের জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি উপমহাদেশের খ্যাতনামা পণ্ডিত আচার্য বেনীমাধব বড়ুুয়ার স্নেহভাজন ছাত্র ছিলেন তিনি।
১৯৪৩ সালে তিনি বি.সি.এস (শিক্ষা) পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি উচ্চশিক্ষার্থে সরকারি বৃত্তি নিয়ে লন্ডন যান। তার ইচ্ছা ছিল পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়ন করা। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের প্রতিক‚ল মনোভাবের জন্য তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। অত:পর এম.এ. ডিগ্রী নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। Early Buddhism and The Brahmanical Doctor শীর্ষক অভিসন্দর্ভ লিখে তিনি লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন : শিক্ষকতার কাজ দিয়ে প্রমোদ রঞ্জনের কর্মজীবনের স্থীরম্ভ হয়। ১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম কলেজে উপাধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাঙ্গামাটি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৪ সালে প্রমোদ রঞ্জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচ্য ভাষা বিভাগে সুপারনিজমেমারি অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডকেট সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুয়া ১৯৯৪ সালের ১৭ই জানুয়ারি পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে গেছেন।
রচনাবলী : অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন প্রচুর লিখেছেন। তাঁর লিখিত রচনা সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া গেল।
প্রমোদ রঞ্জনের লিখিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো Early Buddhism and the Brahmanical Doctrines. গ্রন্থটি তাঁর লওন বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা অভিসন্দর্ভের ভিত্তিতে রচিত। গ্রন্থটি ছয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রধান অধ্যায়গুলো হলো:
A. The Doctrine of Atman or Soul
B. The Doctrine of Caste
C. Sacrifice and Rituals
D. Yods and the Brahma-Viharas গ্রন্থটি Asiatic Society of Pakistan কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুুয়া কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধ সমূহ মূল্যবান এবং উচ্চমান সম্পন্ন। নিম্নে তাঁর রচিত কয়েকটি প্রবন্ধের উল্লেখ করা গেল।
* Pali and Its origin (THE ASIATIC SOCIETY OF PAKISTAN-1953)
* The doctrine of Impermanence (Mohammed Shohidullah Falicitation Volume-1953)
* Riddles in the Pali literature (Journal of the Asiatic Society of Pakistan-1963)
The Yaksa belief in early Buddhism Journal (Asiatic Society of Pakistan – 1965)
* The place of the Brahmanas in Buddhisht literature (Journal of the Asiatic Society of Pakistan-1965)
* Buddhist shrines and monasteries in Chittagong (Journal of the Asiatic Society of Dhaka-1972)
* The Buddhist festivals in Chittagong (Journal of the Asiatic Society of Bangladesh-1976)
* Early Buddhisom and the Bhramnical Doctrines (Published as a book which was previously published in Journal of the Asiatic Society of Pakistan

* বৌদ্ধ জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্মবাদ (ইতিহাস পত্রিকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-১৯৬৭)
* বৌদ্ধ সংস্কৃতির ঐতিহাসিক পটভূমি (ইতিহাস পত্রিকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, কার্তিক, ১৩৪৭)
অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুয়ার রচনাবলীর মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক বাদল বরণ বড়–য়া বলেন “এ সব লেখায় তাঁর মননশীলতা, চিন্তার গভীরতা ও ব্যপ্তি, বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞানের উজ্জ্বল পরিচয় ফুটে উঠেছে।
সমাজকর্ম : শিক্ষকতা ও লেখালেখির কাজে নিবিষ্ট হলেও অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়ুয়া সমাজ কর্ম থেকে দূরে থাকেন নি। রেড ক্রম সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর সদস্য হিসেবে তিনি সমাজ কল্যাণের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি আজীবন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং বাংলা একাডেমীর সদস্য ছিলেন। তিনি সাময়িকভাবে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির সহ-সভাপতি হন। তিনি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা সমিতিরও সদস্য ছিলেন।
সম্মাননা : অধ্যাপক প্রমোদ রঞ্জন বড়–য়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্নভাবে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সঙ্ঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ‘সদ্ধর্ম বিশারদ’ উপাধিতে ভূষিত হন।