অটোমেশনে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজে গতি

6

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম বন্দরে শুরু হয়েছে অটোমেশনের মাধ্যমে পণ্য খালাস। গতকাল বুধবার থেকে ছয় শীর্ষস্থানীয় শিপিং লাইন পরীক্ষামূলকভাবে ডেলিভারি অর্ডার দেওয়া শুরু করেছে। এর ফলে বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সহজ হবে। পণ্য খালাস গতি বাড়ার পাশাপাশি সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। একই সাথে সময়ও বাঁচবে। পর্যায়াক্রমে সব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানকে এ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এখন আমদানিকারকদের পক্ষে ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টরা শিপিং এজেন্ট বা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সশরীরে গিয়ে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) গ্রহণ করতে হয়। এতে নষ্ট হয় শ্রমঘণ্টা। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যে ওপর গিয়ে পড়ে। আবার শিপিং এজেন্টদের কার্যালয় সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকক্ষেত্রেই এক দিনের মধ্যে ডিও সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।
এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২২ নভেম্বর ৬টি প্রধান শিপিং এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ শিপিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে আমদানি চালানের বিপরীতে ইলেক্ট্রনিক ডেলিভারি অর্ডার (ইডিও) দেওয়া শুরু করতে অনুরোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে গতকাল বুধবার (১ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এসব শিপিং লাইন ডেলিভারি অর্ডার দেওয়া শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে এপিএল বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, মায়েরস্ক বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স বাংলাদেশ লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স, ওশ্যান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও এমএসসি মেডিটারেনিয়ান শিপিং কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। তবে সব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানকে এই প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে বলে জানান বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর জাহাজ ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে। আর স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার কন্টেইনার খালাস হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪০৬২টি। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩৭৬৪টি। এছাড়া জাহাজ হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির পাশাপাশি কন্টেইনারের পরিমাণও বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউএস। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয়েছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ১৪২ টিইইউএস।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, এখন হাতে তৈরি করা ডেলিভারি অর্ডারে (ডিও) কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট ও হয়রানির শিকার হতে হয়। যা ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি ডিওতে প্রতারণার সুযোগও থাকে। এ কাজটি অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার ফলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। প্রতারণার সুযোগ থাকবে না। একই সাথে সময় বাঁচবে, বাড়বে গতি পণ্য খালাসে। তাই পুরো প্রক্রিয়াকে পেপারলেস করার পাশাপাশি প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনলাইন সিস্টেমে যুক্ত করা গেলে বাণিজ্যে আরও বেশি গতি আসবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরে চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, অটোমেশনের মাধ্যমে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। আগে বন্দর সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিতে হতো। এ প্রক্রিয়া চালু হওয়ার ফলে দেশে যেকোন জায়গা থেকে অনলাইনের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা যাবে। এর ফলে বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও সহজ হবে। আগের চেয়ে পণ্য খালাসে বাড়বে গতি। একই সাথে সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ৬টি প্রধান শিপিং এজেন্ট এ সেবা শুরু করে। পর্যায়াক্রমে সব শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানকে এ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হবে। এজন্য বেশ কিছু কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরে একটি টার্মিনাল পরিচালনা সিস্টেম তৈরি করেছে, যার মধ্যে একটি ইডিও মডিউল সংযুক্ত রয়েছে। ফলে শিপিং এজেন্ট অথবা ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা শুধু প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করলেই ডিও প্রদান করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। প্রথম দিন কোন ধরনের সমস্যা হয়নি। যেহেতু পরীক্ষামূলকভাবে এটি শুরু হয়েছে তাই ম্যানুয়েলিও বেশকিছু দিন রাখা হবে। পর্যায়াক্রমে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় চলে আসবে।