অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা

75

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তৃতীয় দিনের শুনানি গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল তিনটায় শুরু হয়। গতকাল শেষ দিনের শুনানিতে প্রথমে মামলার বাদি গাম্বিয়া, পরে মিয়ানমার তাদের স্ব স্ব যুক্তি তুলে ধরেন। তবে তিন দিনের এই শুনানি শেষে কি হতে যাচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে আছে কক্সবাজারের শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
এদিকে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরা, তাদের উপর বর্বরতার শাস্তি নিশ্চিত নিয়ে অনেকে অজানা। আবার অনেকে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিতের মধ্যে রয়েছে। আজ মিয়ানমারের দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির কারণে একটি বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখন শরণার্থী।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফে সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকায় বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই হেগের খবর জানতে মোবাইল ও রেডিও নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এসময় সীমান্তে টেকনাফের জাদিমুরা নাফনদীর ওপারে খুব নিকটে মিয়ানমার মংডু থেকে পালিয়ে আসা একটি চায়ের দোকানে হতাশা নিয়ে বসেছিলেন মোহাম্মদ করিম নামে এক বৃদ্ধা রোহিঙ্গা। তিনি বর্তমানে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-ব্লকের বাসিন্দা।
তিনি জানালেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারকে কাঠগড়ায় পৌঁছানো গেছে। এর জন্য গাম্বিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব দেশ সহায়তা করেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু বাংলাদেশে বোঝা হয়ে বিশাল আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে থামবে তা এখানো কেউ জানি না। দিন দিন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? এসব নিয়ে আমরা অনেক চিন্তার মধ্যে জীবন যাপন করছি।
এসময় সামনে এগিয়ে এসে নিজেকে বদি আলম অপর রোহিঙ্গা বলেন, মিয়ানমারের দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি যখন গৃহবন্দি ছিলেন তখন রোহিঙ্গারাই তাকে আন্দোরনের মাধ্যমে মুক্ত করে। কিন্তু বের হওয়ার পর থেকে তিনি রোহিঙ্গাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাছাড়া গাম্বিয়ার আদালতেও সুচি বড় মিথ্যা কথা বলেছে। এটিই হচ্ছে তার আসল চেহারা। সুচির কারণে রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী বনে গেছেন। আমরা আসলে কেউ শরণার্থী হয়ে থাকতে চাই না। নিজ দেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত। শুধু সেদেশে অন্য জনগোষ্ঠী যেভাবে জীবন যাপন করতে চাই সেটুকু চাই। এইটি আমাদের অধিকার, এই অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে চাই। আসলে আমাদের ভবিষ্যৎ কি হচ্ছে তা এখনো অজানার পথে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঘুমধুম শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার গুরুতর যেসব অভিযোগ উঠেছে শুনানিতে তারা সেগুলো অস্বীকার করার চেষ্টাও করেননি। এ ছাড়া ২০১৭ সালে নির্মূল অভিযান শুরুর পর গণহারে রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করার চেষ্টা করেননি। এতে বুঝা যায় তারা গণহত্যার সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৬টা পর্যন্ত হেগে শুনানি চলছে। সেখানে গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের ৬টি দাবি তুলে ধরেছেন। এখন দেখা যাক কি হয়। তবে রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে সেটি নিয়ে আমরা চিন্তিত। গতকাল ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) এর প্রতিনিধি দল সেখানে পৌঁছেন। এসময় নাগরিকত্ব ছাড়া অন্যসব দাবি মেনে নিলে তারা ফিরবে কিনা এমন প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল ফিরতে রাজি বলে জানান তারা।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রæত সমাধান না হলে বাংলাদেশ বহুমুখী সংকটের মধ্যে পরতে পারে। তাই কৌশলে এর সমাধান প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছেন।