অগ্নিবিপদে ফায়ার সার্ভিসের জন্য ওয়াসার পানি সুবিধা

16

এম এ হোসাইন

অগ্নিকান্ড নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসকে সহজে পানি দেওয়ার সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা নগরীতে স্থাপন করছে ১৭৩টি ফায়ার হাইড্রেন্ট। দুটি প্রকল্পের অধীনে এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি হাইড্রেন্ট পরীক্ষা করে (ট্রায়াল) দেখা হয়েছে। ফায়ার হাইড্রেন্ট থেকে অগ্নিকান্ডের সময় সার্বক্ষণিক পানি পাবে ফায়ার সার্ভিস। জিপিএস ব্যবস্থায় সহজে হাইড্রেন্টের অবস্থান নির্ধারণ এবং আধুনিক লকিং সিস্ট্রেম রাখার কারণে পানি অপচয়ের কোনো সম্ভাবনা থাকছে না।
অগ্নিকান্ডের সময় একমাত্র ভরসা পানি। দিন দিন পানির উৎসগুলো হারিয়ে যাওয়ার কারণে অগ্নিনির্বাপনের জন্য পানি পাওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে যে পরিমাণ পানি থাকে অগ্নিকান্ডের সময় সেখান থেকে মাত্র দশ থেকে পনের মিনিট পানি দিতে পারে। কিন্তু এর বেশি পানির প্রয়োজন হলে বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হয়। ওয়াসার ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের মাধ্যমে অগ্নিদুর্ঘটনাকালে নির্বাপক দলকে আর পানির জন্য ছুটোছুটি করতে হবে না। তাদের হাতে থাকা ম্যাপেই দ্রুত পানির উৎস খুঁজে পাবে। সুবিধাজনক হাইড্রেন্ট থেকে সার্বক্ষণিক পানি নিতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার হাইড্রেন্টকে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার একটি ‘যুগোপযোগী অবকাঠামো’ হিসাবে দেখছে ওয়াসা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ২০১৪ সালে ফায়ার সার্ভিসকে হাইড্রেন্ট স্থাপনের জন্য সুবিধাজনক স্থান চিহ্নিত করে নিকশা দিতে পত্র দিই। দীর্ঘদিন পর ফায়ার সার্ভিস ৮৬টি জায়গার নাম উল্লেখ করে পাঠায়। জিপিএস কো-অর্ডিনেট স্থাপনের মাধ্যমে আমরা আবার তালিকা পাঠাই ফায়ার সার্ভিসকে। আমরা মোট ১৭৩টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করবো। এর মধ্যে চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন প্রজেক্টের ২৯টি ফায়ার হাইড্রেন্ট। বাকি ১৪৪টি বসানো হবে কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট ফেজ-২ এর আওতায়।
তিনি বলেন, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাকে একটি ‘যুগোপযোগী অবকাঠামো’ গড়ে দিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮৪টি ফায়ার হাইডেন্ট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস তিনটি ট্রায়াল দিয়েছে। সবকটিতেই পর্যাপ্ত পানি পাওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ম্যাপ অনুযায়ী হাইড্রেন্টগুলো স্থাপন হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কাছে হাইড্রেন্টগুলোর চাবি থাকবে। শুধুমাত্র অগ্নিকান্ডের সময় সার্বক্ষণিক সেখান থেকে পানি নিতে পারবে।
প্রাকৃতিক পানির উৎস বিশেষ করে পুকুর বা জলাশয় ক্রমাগতভাবে কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নগরীর কোথাও আগুন লাগলে মারাত্মক পানির সংকটে পড়ে অগ্নিনির্বাপক দল। পানির পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে অনেক সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ সহায়-সম্বল, বাড়িঘর হারানোর পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি অনুধাবন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা দুটি প্রকল্পের অধীনে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন আগে থেকে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের বিষয়ে ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিসের মধ্যে আলোচনা চলে আসছিলো। অবশেষে সফলভাবে ওয়াসা ৮৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন সম্পন্ন করেছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭৩টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হবে। যে কোনো জায়গায় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধাজনক ফায়ার হাইড্রেন্ট থেকে সহজে পানি নিতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমে যাবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, আগুন লাগলে পানির বিকল্প নেই। আমাদের যে গাড়ি সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটের পানি থাকে। শহরে পুকুর নেই বললেই চলে। অগ্নিনির্বাপনের জন্য হাইড্রেন্টের বিকল্প নেই। অগ্নিনির্বাপনের জন্য হাইড্রেন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ওয়াসার সাথে আমাদের আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাজনক স্থানে এসব হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির সময় জাপানের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান ‘এনজিএস’ ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের পরিকল্পনা তুলে ধরে। ফায়ার হাইডেন্টকে আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ নগরীর জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসাবে বিবেচনা করেন তারা। এরপর থেকে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যায়। অন্যদিকে ফিজিবিলিটি স্টাডিতে দেয়া নকশায় এনজিএস ফায়ার হাইড্রেন্টের জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেয়। এই নকশা ধরেই ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিসের আলোচনা চলে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিস ৮৬টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের বিষয়ে জানালেও পরবর্তিতে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বৈঠকে পুরো নগরের মধ্যে ১৭৩টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্থাপন করা ফায়ার হাইড্রেন্টসমূহ সুইডিস স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এবং পিলার টাইপের। হাইড্রেন্টের বডি গ্রে কাস্ট আয়রন এবং ডাকটাইল আয়রন। স্টেইনলেস স্টিলের স্পিন্ডেলে তৈরি হাইডেন্টগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও অধিক মজবুত বলে দাবি ওয়াসার।