অগ্নিনির্বাপনে সক্ষমতার সাথে বাড়ছে না সচেতনতা

14

তুষার দেব

উপজেলা পর্যায়ে দমকল বাহিনীর জনবল ও আধুনিক সরঞ্জামের সঙ্কট থাকলেও বিভাগীয় পর্যায়ে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি বিভাগীয় পর্যায়ে যুক্ত হয়েছে আগুন নেভানোর বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। যার একটি দিয়ে ২০ তলা ভবনের আগুন নেভানোর পাশাপাশি উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব। অন্যটি ব্যবহার হয় বিশেষায়িত কেমিক্যালের আগুন নেভানোর কাজে। তবে অগ্নিনির্বাপনে সক্ষমতার সাথে বাড়ছে না সচেতনতা। সমানে কমছে অগ্নিনির্বাপনের প্রধান উপাদান পানির উৎস।
বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানা খাতে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ক্রয় করে ফায়ার স্টেশনগুলোতে দেয়া হয়েছে। তবে এসব সরঞ্জাম আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ের স্টেশনের বহরেই যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬৮ মিটার লম্বা টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল)। এর সাহায্যে ২৪ তলা উঁচু ভবনে উদ্ধার এবং অগ্নিনির্বাপণের কাজ করা যায়। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ৮৮ দশমিক পাঁচ ফুট লম্বা ল্যাডার, ৫৪ মিটার লম্বা ভিমা ও স্কাই লিফট, হাজমত টেন্ডার এবং কেমিক্যালের আগুন নেভানোর জন্য কেমিক্যাল টেন্ডার নামে একটি নতুন অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি সংযোজন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বিভাগীয় সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, জনবল ও সরঞ্জামের যে ঘাটতি সেটা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এখনও উপজেলা লেভেলে পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামের সঙ্কট তো রয়েছেই।আবার বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষিত ফায়ার কর্মীরও অভাব রয়েছে। বহরে নিত্যনতুন সরঞ্জাম যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ছে। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিন্তু অগ্নিনির্বাপন ও উদ্ধারকাজে আমাদের সক্ষমতার তুলনায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে না।
বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২০২২ সালে ৬৫৯টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৫৮ জন নিহত এবং ২৫২ জন আহত হন। ২০২১ সালে ৬৭০টি অগ্নিকান্ডে সাতজন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পয়লা মার্চ পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৫০টি। তবে এতে কতজন নিহত হয়েছে, তা জানাতে পারেনি বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামে বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়সহ তিনটি জোনে ফায়ার স্টেশন কার্যালয় রয়েছে ২৫টি। এর মধ্যে জোন-১ এ রয়েছে নয়টি, জোন-২ এ রয়েছে ১০টি এবং জোন-৩ এ রয়েছে ছয়টি। জোন-১ এর আওতায় রয়েছে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন, বন্দর ফায়ার স্টেশন, সিইপিজেড ফায়ার স্টেশন, কুমিরা ফায়ার স্টেশন, সীতাকুÐ ফায়ার স্টেশন, মিরসরাই ফায়ার স্টেশন, সমুদ্রগামী ফায়ার স্টেশন, নিউমুরিং ফায়ার স্টেশন ও স›দ্বীপ ফায়ার স্টেশন। দুই নম্বর জোনে রয়েছে পটিয়া ফায়ার স্টেশন, সাতকানিয়া ফায়ার স্টেশন, নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন, চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন, লামাবাজার ফায়ার স্টেশন, বোয়ালখালী ফায়ার স্টেশন, আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন, বাঁশখালী ফায়ার স্টেশন, চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন ও কেইপিজেড ফায়ার স্টেশন। আর তিন নম্বর জোনে রয়েছে কাপ্তাই ফায়ার স্টেশন, কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন, রাউজান ফায়ার স্টেশন, ফটিকছড়ি ফায়ার স্টেশন, হাটহাজারী ফায়ার স্টেশন ও বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন।
ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামে তিন শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোর এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিভুক্ত স্টেশনগুলোতে ৩৭ জন করে, দ্বিতীয় শ্রেণির স্টেশনগুলোতে ২৭ জন করে এবং তৃতীয় শ্রেণির স্টেশনগুলোতে ১৫ জন করে জনবল থাকার কথা। কিন্তু প্রত্যক স্টেশনেই জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম প্রয়োজন অনুযায়ী থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে একটি দুর্ঘটনার কাভার করতে কয়েকটি স্টেশনের কর্মীদের সংযুক্ত করা হয়ে থাকে। অপরদিকে শহর এলাকায় আগুন নেভানোর প্রধান উপাদান পানির উৎস অর্থাৎ পুকুর ও জলাশয় দিন দিন কমছে। এ কারণে আগুন নেভাতে দিয়ে পানির সংকটে পড়তে হয়। আবার নগরীর কিছু এলাকার রাস্তা সরু। ভবনগুলো একটি সাথে অন্যটি গা ঘেঁষে নির্মিত। এজন্য উদ্ধার অভিযানে দুর্ঘটনাস্থলে গাড়ি ঢোকানো কঠিন হয়ে যায়। অনেক জায়গায় আধুনিক সরঞ্জামাদি পৌঁছানো যায় না। ফলে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার কর্মীদের বেগ পেতে হয়।
জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কথা স্বীকার করে সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম দুলাল বলেন, সীতাকুন্ড বৃহত্তম শিল্প এলাকাগুলোর অন্যতম। এখানে ছোটবড় অনেক কলকারখানা আছে। প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন হিসেবে সেখানে ৩৫ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও পাঁচজন কম রয়েছেন। ছয়টি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই আরও কিছু গাড়ির চাহিদাপত্য পাঠানো হয়েছে। জনবল কম হওয়ার কারণে ক্রাইসিস পিরিয়ডে ফায়ার কর্মীদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়।