অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন জরুরি

10

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় চট্টগ্রামে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেক বৈদ্যুতিক গোলযোগ সৃষ্ট। ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগুনের ঝুঁকি’ শীর্ষক এক গবেষণায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) গবেষকরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন চট্টগ্রামে ২০১৫ সাল হতে গত সাত বছরে ৩ হাজার ১১৪টি অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটেছে। যার ৬৬ শতাংশের উৎস ছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। বাকি ১১ শতাংশ রান্না ঘরের আগুন, ১৩ শতাংশ রাসায়নিক পদার্থ, ৯ শতাংশ সিগারেটের আগুন আর ১ শতাংশ অন্যান্য কারণে সংঘটিত হয়েছে। মোদ্দাকথা চট্টগ্রামে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে অগ্নিকাÐের ঘটনার সংখ্যা বেশি। আধুনিক জীবনযাত্রায় বিদ্যুৎ অপরিহার্য। কিন্তু অপরিহার্য বিদ্যুৎ সেক্টর দেশে অসংখ্য অগ্নিদুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। যা জাতির জন্য শুভকর নয়। ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার বা ওভারলোডিং, ত্রæটিপূর্ণ সরবরাহ লাইন, নি¤œ মানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার, বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ লাইন ও যন্ত্রপাতি নিয়মিত চেকআপ না করার কারণে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটজনিত দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অবহেলা এবং দায়সারা গোছের কর্মকাÐের কারণে সমগ্র দেশের মানুষ বিদ্যুতের উপকারভোগী হলেও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অগ্নিকাÐের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ বিভাগ, মন্ত্রণালয় এবং তৎসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে এমনটা হচ্ছে। বহির্বিশ্বে বিদ্যুৎ সেক্টরে আমাদের দেশের মতো ব্যাপক সমস্যা খুব একটা দেখা যায় না। বিশ্বের বহু দেশের আধুনিক নগরীতে বিদ্যুতের তার পর্যন্ত চোখে পড়ে না। অথচ সেখানের সরবরাহ লাইন আন্ডারগ্রাউন্ড এবং টেকসই। যার কারণে বহু দেশে লোডশেডিং যেমন কম তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ত্রæটিও তেমন দেখা যায় না। আমাদের দেশে বিদ্যুতের খুঁটি এবং সরবরাহ লাইন টেকসই ও নিরাপদ নয়। বিষয়টি জাতীয়ভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাধান করা জরুরি। প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা যায়Ñ সরবরাহ লাইনের নড়বড়ে অবস্থার কারণে।
প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা কাজ করেন সরবরাহ লাইন মেরামতের। পরিকল্পিত ভাবে মজবুত করে বিদ্যুৎ লাইনের কাজ করা হলে জনগণের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত হয়রানি কমে যাবে। এ বিষয়ে উন্নত মানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারের পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রয়োজন, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার আরেক প্রতিবেদন হতে জানা যায়- দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা কাটিয়ে জাতীয় গ্রিডকে সমৃদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্লান্ট ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুখবর প্রদান করেছে। বাঁশখালী এসএম পাওয়ার প্লান্ট হতে ৪০০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ বিগত ডিসেম্বর হতে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে উক্ত পাওয়ার প্লান্ট হতে ১৩২০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তা ছাড়া আগামী ডিসেম্বরে কক্সবাজার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে প্রথমে ৬০০ মেগাওয়ার্ড ও পরে আরো ৬০০ মেগাওয়ার্ডসহ সর্বমোট ১২০০ মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আশার কথা হলো বাঁশখালী ও মাতার বাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পূর্ণ চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার উন্নতি হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ লাইনকে টেকসই ও আধুনিকায়ন সময়ের দাবি। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া বিদ্যুতের উপকার ভোগীদের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অগ্নিদুর্ঘটনার মুখোমুখি হতেই হবে। যা কোন অবস্থাতে জাতির জন্য সুখকর এবং কাম্য নয়। চট্টগ্রাম তথা দেশের অগ্নিকাÐ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যুৎ বিভাগকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি বর্তমান বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনকে আরো মজবুত, টেকসই ও আধুনিক করে পুনস্থাপন করতে হবে। তা ছাড়া দেশের সর্বস্তরের জনগণ তথা বাসাবাড়ির মালিক, ব্যবসা কেন্দ্র, শিল্পকারখানা ইত্যাদি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষকে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন এবং বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ তারের সংযোগ, নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রত থাকতে হবে। কেননা একটু অবহেলার কারণে উপকারী বিদ্যুৎ, দেশ ও সমাজের অপকারে পরিণত হবে।
অতএব, সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। জাতীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে আশানুরূপ সতর্কতা চট্টগ্রাম তথা দেশের অসংখ্য বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অগ্নিদুর্ঘটনা হতে জাতিকে মুক্তি দেবে এমন বক্তব্য সমগ্র দেশবাসীর।