অক্সিজেন সংকট দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিন বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে

11

 

বৈশ্বিক মহামারি করোনার ডেল্টারূপের সংক্রমণে যখন দেশব্যাপী নতুনভাবে মৃত্যু ও রোগী বাড়ছে, ঠিক তখনই হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের কোন কোন হাসপাতালে অক্সিজেন না পাওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। কারণ প্রায় দুই বছর করোনা মহামারি বিভিন্ন রূপ নিয়ে তাড়া করছে বিশ্ববাসীকে। বাংলাদেশ এবারসহ ১৯ মাসে তৃতীয়বার সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে, এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছেন দেশের সব জেলা হাসপাতালে আইসিওসহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত চিত্রই ফুটে উঠছে। করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ যখন ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী, তখন ফের চিকিৎসা সংকটের চিত্র উঠে আসছে। করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের অন্যতম প্রধান উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। যখন রোগীর শ্বাসকষ্ট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে, তখন অক্সিজেন সরবরাহের বিকল্প নেই। আমরা লক্ষ করে আসছি, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও অক্সিজেন সরবরাহে সংকটের বিষযটি। সংবাদপত্রে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়ে সংকট মোকাবেলা করেছিল। তখনও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞমহল থেকে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে তৃতীয় ঢেউ-এর ভয়াবহতা এবং দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে আইসিইউসহ সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েই আসছে। গত দুইদিনে সকল ইলেক্ট্রিক ও সহযোগী দৈনিকগুলোতে উঠে এসেছে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা হাসপাতালে চাহিদানুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় মৃত্যুর হার কীভাবে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্র হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার আটটি জেলার যে তথ্য দিয়েছে বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই- এমনটি তথ্য উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। আমরা চলমান করোনা দুর্যোগেও পদে পদে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অবহেলার যে পরিচয় পাচ্ছি, তাতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান, অতীত থেকে তারা কোনো শিক্ষাই নেননি। গত সপ্তাহে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে পাঁচজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, শনিবার জাতীয় সংসদে এ কারণে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের ‘তোপের মুখে’ পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং । অন্যদিকে গত শুক্রবার একটি ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় বগুড়ার একটি হাসপাতালে ক্যানুলা স্বল্পতার কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা প্রচারিত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রাতেই বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে আদালত এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষকে জেনে জানাতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় অ্যাটর্নি জেনারেল শনিবার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চকে জানান, রোববারের মধ্যে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ১০ থেকে ১৫টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা পৌঁছে দেওয়া হবে। স্বীকার করতে হবে, করোনা দুর্যোগের আগে হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ অক্সিজেন লাগত, বর্তমানে এর চাহিদা বহুগুণ বেশি। যেসব হাসপাতাল অক্সিজেন সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় রয়েছে, সেসব হাসপাতালে সমস্যা কিছুটা কম হলেও অনেক হাসপাতালে এই সুযোগ নেই। ফলে সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হয়। আমরা দেখেছি অতীতে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও স্বার্থান্বেষী চক্র এই সংকটকে পুঁজি করে নিজেদের পকেট ভারী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আমরা এ-ও দেখেছি, একশ্রেণির সামর্থ্যবান অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে মজুদের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। কারও সামর্থ্য থাকলেই জীবন রক্ষাকারী জরুরি উপাদান অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে মজুদ করতে পারেন না। তা ছাড়া সিলিন্ডার, হাইফ্লো ও রোগীর শ্বাসনালিতে কৃত্রিম যন্ত্রের মাধ্যমে এই তিন উপায়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ও পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক বিভাগীয় ও জেলা সদর হাসপাতালেই চাহিদানুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ নেই। সেক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা সহজেই অনুমেয়। রবিবার একটি জাতীয় সহযোগী দৈনিকে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের উপজেলা স্তরে ৭০ ভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করোনার কোন চিকিৎসায় চলে না। এমনকি ওই হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত চিকিৎসকও যান না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টায় আছে সেই প্রথম সংক্রমণ থেকে। আমরা মনে করি, প্রযুক্তির এ যুগে মন্ত্রণালয়ের বুঝা উচিৎ জনগণকে এখন সহজে বুঝ দেয়ার দিন নেই। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীর মৃত্যুহার বাড়ছে। এমতাবস্থায় হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, সিলিন্ডারসহ পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার দ্রæত ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশব্যাপী জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে করোনার চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে দেশের বিত্তবান ও বিভিন্ন উদ্যোক্তারাও অক্সিজেন সংকট লাঘবে এগিয়ে আসতে পারে। এ ধরনের সংকটকালে সকলকে মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। আশার কথা, দৈনিক পূর্বদেশ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা প্রদান করে আসছে।