অক্সিজেন মোড়ে অক্সিজেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্মাণাধীন একটি কালভার্ট অক্সিজেন মোড়ের দুর্ভোগের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুইবছর ধরে কালভার্টটির নির্মাণ কাজ চলে আসছে। তিনধাপে চলা কালভার্টটির নির্মাণ কাজ শেষ ধাপে এসে আটকে আছে। একবছরেরও বেশি সময় ধরে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে এ অংশটি। রাস্তার বড় একটি অংশজুড়ে গর্ত করে রাখায় যান চলাচলে যেমন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে।
হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মাসুমুল ইসলাম নিয়মিত অক্সিজেন হয়ে শহরে আসেন। অক্সিজেন মোড়ে এসে যানজটে পড়তে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াসার পাইপলাইনের কাজ নাকি সিটি কর্পোরেশনের কাজ সেটা জানি না। তবে এতোদিন ধরে রাস্তার এক অংশ বন্ধ করে রেখে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার কোনো মানে হয় না। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তার একপাশ বন্ধ আছে। অক্সিজেন মোড়ে আসলেই নিয়মিত যানজটে পড়তে হচ্ছে। তাছাড়া ধুলোবালিও প্রচুর এখানে। রাস্তার মধ্যে বিশাল গর্ত খুঁড়ে করে রাখা হয়েছে। একটু অসচেতন অবস্থায় হাঁটলে গর্তে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
অক্সিজেন মোড়ে এসে নিয়মিত দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়সহ পথচারীরা। রাস্তার উপর বিশাল গর্ত দেখা গেলেও কোন সংস্থার কাজ চলছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই কারো। কেউ রাস্তার মধ্যে গর্ত করে ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের কথা জানালেও আবার কেউ বলছেন সেখানে কালভার্টের কাজ হচ্ছে। যে সংস্থা কাজ করুক না কেন, কাজ যেন দ্রুত শেষ করে সেই দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন, এখন যে গর্ত করে রাখা হয়েছে সেটা একবছরের বেশি সময় ধরে আছে। কোনো কাজ না করে শুধু গর্ত করে রেখে দেয়া হয়েছে। তার আগে রাস্তার অপর পাশে কাজ করা হয়েছে। রাস্তায় মাটি তুলে রাখাতে ধুলোবালিতে পুরো এলাকা একাকার হয়ে গেছে। দ্রুত কাজ শেষ করে মানুষজনকে দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিক সেটাই আমরা চাই।
মূলত অক্সিজেন মোড়ে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের অধীনে একটি কালভার্ট স্থাপনের কাজ চলছে। বড় এই কালভার্টের কাজ করতে গিয়ে ওয়াসার পাইপলাইন, টেলিফোন লাইন, গ্যাস লাইনের মধ্যে সমন্বয় করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তিনভাগে কাজটি ভাগ করে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলমান আছে। ইতিমধ্যে দুটি অংশের কাজ শেষ হলেও শেষ অংশে এসে জটিলতায় পড়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। প্রায় দেড় ফিটের মধ্যে একশ ফিটের কাজ শেষ হলেও বাকি ৫০ ফিটের কাজ করতে গিয়ে এমন জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহের প্রধান পাইপলাইন গিয়েছে এই অংশ দিয়ে। ওয়াসার পাইপলাইনের বিষয়টি প্রথম থেকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানতো না। শেষ পর্যায়ে এসে ওয়াসার পাইপলাইন থাকার বিষয়টিকে সামনে রেখে নতুন করে আবার প্ল্যান করতে হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে। যার কারণে শেষ অংশের কাজ দীর্ঘসময় ধরে ঝুলে আছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে পথচারীদের।
জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের তদারক সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগের্ডের পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, অক্সিজেনের কাজটি আমরা ৩ ভাগে করে করছি। দুই ভাগের কাজ শেষ, সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। তৃতীয় ভাগের কাজ করতে এসে আমরা বড় একটা সমস্যায় পড়ে গেছি। সেখানে ওয়াসার এমন বড় লাইন যেটাতে টার্চও করা যাবে না। স্পেশাল এই লাইনটার ক্ষতি হলে ওয়াসাও মেরামত করতে পারবে না। জটিল একটা প্রক্রিয়াতে পড়ে আমাদের নতুনভাবে প্ল্যান করতে হচ্ছে। যে প্রক্রিয়াতে ওয়াসার লাইনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।
তিনি বলেন, আশা করছি, আমরা মাস-দুয়েকের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো। এখন প্ল্যান করছি, ওয়াসার লাইনের উপরে স্ল্যাব বানিয়ে দিব। উপরে গাড়ি চলাচল করলে সে লোড পড়বে ¯ø্যাবের উপর। ওয়াসার লাইনে কোনো লোড পড়বে না। কাজের শুরুতে আমরা যদি ওয়াসার লাইনের কথা জানতাম তাহলে তখনই ভিন্নভাবে প্ল্যান করা যেতো। কিন্তু যখন শেষভাগের কাজ করতে নামলাম তখনই ওয়াসার লাইনের কথা জানলাম। তারপরও আমরা এখন কাজটি শেষ করব।
সরেজমিনে গিয়ে অক্সিজেন মোড়ে বিশাল গর্তের পাশ ঘেঁষে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা যায়। কালভার্টের কাজ করার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়েছে গর্তের মধ্যে। চার পাশে মাটি স্ত‚প করে রাখা আছে। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদের দিকে আসার সময় বামপাশের সড়কটির মুখ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কালভার্টের কাজের জন্য সড়কটি খুঁড়ে গর্ত করে রাখা হলেও সেখানে কাজ করতে কাউকে দেখা যায়নি। রাস্তার মধ্যে অতিরিক্ত ধুলোবালি ছড়িয়ে আছে। বায়েজিদ বা হাটহাজারীর দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে আটকা পড়তে হচ্ছে মোড়ে এসে। সড়কের একপাশে কালভার্টের কাজ, অন্যপাশে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ডের কারণে প্রায় সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
উত্তর চট্টগ্রামের সাথে শহরের সংযোগস্থল হচ্ছে অক্সিজেন মোড়। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির গাড়িও অক্সিজেন হয়ে চলাচল করে। হাটহাজারী-ফটিকছড়ির বিশাল একটি অংশের মানুষ চাকরির সুবাদে শহরে নিয়মিত বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করেন। সব মিলিয়ে অক্সিজেন মোড়ে প্রচুর গাড়ির চাপ থাকে। এতো গাড়ির চাপের মধ্যে কালভার্টের জন্য রাস্তার একটি অংশ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন সবাই।