অক্টোবরে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি

30

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগাম নির্বাচনের ইঙ্গিতে আন্দোলন জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। আগামি মার্চ থেকে কঠিন আন্দোলনের দিকে যেতে চায় দলটি। সে অনুযায়ী দলের পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
আগামিকাল শনিবারের বিভাগীয় সমাবেশের পর থেকে কঠিন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা থাকলেও দলটি শক্তি নিয়ে এগুতে চায়। এ জন্য আগামি মার্চ থেকে শক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা এবং অক্টোবর-নভেম্বরে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা।
বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে দলটির আপাতত কোনো চিন্তা না থাকলেও সরকারের কৌশলের আশ্রয় নিয়ে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। কৌশলী মনোভাবের কারণে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে অপ্রস্তুত রাখতে তার আগেও জাতীয় নির্বাচন করা হতে পারে। সরকারের শেষ সময়ে কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার যে পরিকল্পনা সেটাকে নষ্ট করতে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করার কথা ফেলে দেয়ার মতো নয়। বিএনপি অপ্রস্তুত থাকলে সে সুযোগ কাজে লাগাবে সরকারি দল। হুট করে আন্দোলন পরিকল্পনা সফলতার দেখা নাও পেতে পারে। সেজন্য মার্চ থেকে কঠিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
আগামিকাল শনিবারের বিভাগীয় সমাবেশে সামনের কর্মসূচি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবে নেতা-কার্মীরা এমনটাও ইঙ্গিত আছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে অতীতেও সফল হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও সফল হবো- ইনশাআল্লাহ। সরকারের পদত্যাগের আগে কোনো আলোচনা হবে না। সব সময় খালেদা জিয়া যে কথাটি বলেন, জনগণ অবশ্যই নিজ অধিকার আদায় করবে।
সূত্র মতে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বেঠকে আগাম নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে’। সে অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথমার্ধ থেকে আগামি জানুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যে কোনো সময়ে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির সাথে এই সময়েরও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। কোন সময়ে নির্বাচনের বিএনপি অপ্রস্তুত থাকবে সেটাকে টার্গেট করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে এমনটা মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে সরকারের এমন পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার সমস্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথাও জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। সরকারকে হঠিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও দাবি করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে। যে কোনো সময় চ‚ড়ান্ত আন্দোলনে নামতে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব আন্দোলন কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার নানা পাঁয়তারা থাকবে, সেগুলোকে ভেস্তে দিয়েই দাবি আদায় করতে হবে। যুগপৎ আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল দলকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন দেশে হতে দিবে না জনগণ। সরকারের পতনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তারপর নির্বাচনে সব দল অংশ নিবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন আগে হোক আর পরে হোক, সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, সেভাবে এগুচ্ছি’।
বিএনপি চলমান আন্দোলন আরো বিস্তৃত করতে চাইছে। ধারাবাহিকভাবে ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে দলটি। আন্দোলনের মানুষকে উৎসাহিত করতে চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক গণসমাবেশ চট্টগ্রাম থেকে শুরু করা হয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক প্রতিটি কর্মসূচিতে চট্টগ্রামকে ‘টেস্ট কেইস’ হিসাবে নেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে যে কর্মসূচি সফল হচ্ছে, দেশের অন্যান্য জায়গাতেও সে কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের বড় কর্মসূচিগুলো চট্টগ্রাম থেকে শুরু হবে এমনটা মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজধানীকে টার্গেট করছে দলটি।