‘অকাল বিদায়’ তথ্য সচিবের

12

ঢাকা প্রতিনিধি

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার বছরখানেক আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানো নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও আর্থিক কারণের কথা উল্লেখ করে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কারও সঙ্গে দূরত্বের কথাও বলছেন অনেকে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সচিব মকবুল হোসেন গতকাল সচিবালয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি জানি না আমাকে কেন অবসরে পাঠানো হলো। মানুষকে ফাঁসি দিলেও তো একটা ট্রায়াল হয়। কিন্তু আমি জানি না কোন কারণে এই সিদ্ধান্ত।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করায় তার বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা লন্ডনে গিয়েছিলাম মার্চে, একটা টিম নিয়ে। আমাদের প্রেসের দায়িত্বে আছেন আশিকুন্নবি। তার কাছে জিজ্ঞাসা করলে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাদে আছে, হাতি যখন কাদায় পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে। আমি মার্চে লন্ডন গিয়েছিলাম। এই অভিযোগের বিষয়টি সত্য হলেও সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। আজ তো অক্টোবর। এতদিন এই প্রশ্ন আসেনি কেন? আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না এবং তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই, যোগ করেন তিনি।
তার চাকরির মেয়াদে বিএনপি সরকারের আমলেও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সামনা-সামনি তাদের দেখা হয়নি। তিনি তো মন্ত্রীও ছিলেন না, এমপিও ছিলেন না। টেলিভিশনে তাকে দেখেছি, সেটা তো স্বাভাবিক।
অভিযোগ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আপনাদের তো জানার অনেক পথ আছে। এ ধরনের কোনও বিষয় যদি আপনাদের নলেজে আসে এবং সেটা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয়, অবশ্যই তা পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। আমি বাংলাদেশের যেখানেই থাকি আমাকে এই প্রশ্ন করবেন যে আপনি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন কি না। ওমুক জায়গায় বিএনপির লোকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কিনা বা আপনার সংযোগ বিএনপির সঙ্গে আছে কিনা। শুধু আজ বা কাল নয়, কোনও সময় যদি এমন কোনও সংযোগ আমার সঙ্গে পান, আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন।
নিজের কাজের সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনারা তথ্য সংগ্রহ করুন। আমি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম কিনা। দুর্নীতি দুই রকমের। একটা আর্থিক দুর্নীতি, আরেকটা ইন্টেলেকচুয়াল দুর্নীতি। আপনারা প্রতিদিন এখানে আসবেন। আমি ইন্টেলেকচুয়াল ও আর্থিকভাবে কতটা স্বচ্ছ ছিলাম, কতটা অস্বচ্ছ ছিলাম, তা জানতে পারবেন।
এদিকে, চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও স¤প্রচারসচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানোর অন্তর্নিহিত কারণ সম্পর্কে জানেন না তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, অন্তর্নিহিত কারণ কি, সেটা জানি না। অন্তর্নিহিত কারণ বলতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে সচিব মকবুল হোসেনকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। ধারাটিতে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে। তবে যে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে। মকবুল হোসেনের চাকরির মেয়াদ আরও বছরখানেক ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমের সইয়ে জারি প্রজ্ঞাপনে মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়। মকবুল হোসেন ২০২১ সালের ৩১ মে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়ে সচিব পদে যোগ দেন। এই পদে যোগ দেওয়ার আগে তিনি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।