পূর্বদেশ ডেস্ক
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর তিনজন উপদেষ্টা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
গতকাল সোমবার বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পদত্যাগত্র জমা দিলেও তা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তাদের অফিস করতে বাধা নেই।
বিজ্ঞান ওপ্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে টেকেনোক্র্যাট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপদেষ্টা পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। পদত্যাগপত্র কার্যকর করার পদ্ধতি আছে, সেই প্রক্রিয়াটা আমরা শুরু করেছি। প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরে সেটা কার্যকর হবে।
পদত্যাগপত্র কবে কার্যকর করা হবে, সেই প্রশ্নে মাহবুব বলেন, ধরাবাধা কোনো আইন নেই যে এতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রক্রিয়া আছে, অনুমোদন নিতে হবে। পতত্যাগপত্র গ্রহণ করে গেজেট হবে, পদ যখন খালি হবে তখন শূন্য পদ, মন্ত্রণালয় ভাগ করা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। খবর বিডিনিউজের।
পদত্যাগ করা তিন উপদেষ্টা ছাড়াও মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা, সজীব আহমেদ ওয়াজেদ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং সালমান ফজলুর রহমান বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে সালমান ফজলুর রহমান ছাড়া অন্যরা সংসদ সদস্য নন।
প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, উনার নিয়োগ পুরোটাই অবৈতনিক। উনি তো কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া করা হয়েছে, তাদেরটা এখান থেকে (প্রক্রিয়া) হচ্ছে। যাদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, তারা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভা ছোট হবে কিনা এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
অফিস করলেন জব্বার, দপ্তরে আসেননি ইয়াফেস-শামসুল : পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর দিন গতকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম অফিসে আসেননি। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এদিন অফিস করেছেন, সই করেছেন চারটি ফাইলে।
মন্ত্রী পদের মেয়াদ সংক্রান্ত সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, মন্ত্রীর পদ শূন্য হবে যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেন। তবে সংসদ সদস্য না হয়েও যারা মন্ত্রিসভায় আছেন তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে ‘বাধা নেই’ বলে সোমবার সচিবালয়ে মোস্তাফা জব্বার সাংবাদিকদের জানান।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা যখন (পদত্যাগপত্র) কার্যকর করব, তখন আর অফিস করতে পারবেন না।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিবেকানন্দ রায় বলেন, আজ (সোমবার) মন্ত্রী অফিসে আসেননি। তবে এই মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর মন্ত্রী আর অফিস করবেন না বলে তাদেরকে জানিয়েছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবদুল আজিজ বলেন, প্রতিমন্ত্রী আজ (সোমবার) অফিস করেননি। এরপর আর অফিসে আসবেন কিনা, তা আমাদের বলেননি।
সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে কিছু বলা নেই। ২০১৮ সালের নভেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তারা পদত্যাগপত্র জমাও দেন। বাকি মন্ত্রীরা সবাই রুটিন কাজ করে গেছেন।