৪০ হাজার টন ডিএপি সার কেনা হচ্ছে বাড়তি দামে

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার আমদানিতেও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের গজব। যুদ্ধের কারণে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশ থেকে আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কিনতে যাচ্ছে সরকার। তবে দাম আগের তুলনায় কয়েকগুণ চড়া। বছরে ১৫ লাখ টন ডিএপির চাহিদা সামাল দিতে এই সার আমদানি করা হচ্ছে। চাহিদার মাত্র ১ লাখ টন যোগান দেয় আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া এলাকায় স্থাপিত ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানা ইউনিট (১) এবং ইউনিট (২)। এদিকে গত বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রতি টন ১ হাজার ১৭৭ ডলারে এই সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী সভাশেষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের কারণে দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে। আগে প্রতি টনের দাম ছিল ১ হাজার ১৫৬ ডলার।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই সার কেনার ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময়র হার ৮৭ টাকার কিছু বেশি ধরা হয়েছে। এই হিসাবে মরক্কোর রাষ্ট্রীয়-মালিকানাধীন ওসিপি গ্রæপ থেকে মোট ৪০৭ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এই সার আমদানি করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে ৫৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি রাসায়নিক সারের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন টিএসপি, সাড়ে সাত লাখ মেট্রিক টন এমওপি এবং সাড়ে ১৬ লাখ মেট্রিক টন ডিএপি। দেশের কিছু ইউরিয়া উৎপাদিত হলেও অন্যান্য সারের বেশিরভাগটাই আমদানি করতে হয়। এর একটি অংশ আসত রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে এখন সেখান থেকে সার পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই সরকার অন্যান্য উৎস থেকে সার পাওয়ার চেষ্টা করছে। গত বছরের তুলনায় সারের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের ভর্তুকিও বেড়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে ৯ হাজার কোটি টাকা করে সারে ভর্তুকি দিয়ে এলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতে পারে বলে গত জানুয়ারিতে আভাস দিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া আমদানিতে ব্যয় হয় ৯৬ টাকা, টিএসপি ৭০ টাকা, এমওপি ৫৪ টাকা ও ডিএপিতে খরচ হয় ৯৩ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের আমদানি মূল্য ছিল ৩২ টাকা, টিএসপি ৩৩ টাকা, এমওপি ২৩ টাকা, ডিএপি ৩৭ টাকা।
দৈনিক পূর্বদেশের আনোয়ার প্রতিনিধি খালেদ মনছুর জানান, ২০০৬ সালে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া এলাকায় স্থাপিত ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার যাত্রা শুরু হয়। এটি বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ব ডিএপি সার কারখানা। চীন এবং জাপানের কারিগরি সহায়তায় স্থাপিত এই কারখানায় ইউরিয়া এবং টিএসপিকে একত্রিত করে তৈরি করা হচ্ছে ডিএপি। অর্থাৎ, জমিতে ডিএপি সার দিলে ইউরিয়া এবং টিএসপি সার আলাদা আলাদাভাবে দিতে হয় না। দেশে বছরে ডিএপি সারের চাহিদা ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ডিএপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে অ্যামোনিয়া এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা গ্যাস। ডিএপি সার কারখানা অ্যামোনিয়া সংগ্রহ করে পাশের দুই সার কারখানা কাফকো এবং সিইউএফএল থেকে। এই দুই কারখানা তাদের ফ্যাক্টরির জন্য উৎপাদন করা অ্যামোনিয়ার উদ্বৃত্ত অংশ ডিএপি সার কারখানার কাছে বিক্রি করে। গ্যাস আসে বিদেশ থেকে। যা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট ছোট কার্গো বোটে করে ডিএপি কারখানা জেটিতে খালাস হয়। অ্যামোনিয়া সংগ্রহের সুবিধা এবং বন্দর সংলগ্ন কারখনার সুবিধা দেশের অন্য কোনো স্থানে না থাকায় সরকার ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আরো ডিএপি সার কারখানা স্থাপন করতে পারছে না। তবে ঘোড়াশাল সার কারখানা চালু হলে সেখানে ডিএপি সার কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতি কেজি সার উৎপাদনে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৫০ টাকা। সরকার ভূর্তুকি মূল্যে কেজি প্রতি ১৪ টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করেন। ডিলাররা সরকার নির্ধারিত ১৬ টাকা মূল্যে কৃষকদের নিকট বিক্রি করেন।
এই বিষয়ে ডিএপি সার কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আলমগীর জলিল জানান, আমাদের কারখানা সারা বছর ধরেই উৎপাদনে আছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ টন। সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না।