অধ্যক্ষ আবু তৈয়ব
অনেক পেশা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সাথে তাল মিলাতে ও অভিযোজিত হতে না পেরে, উপযোগিতা হারিয়ে ফেলেছে বলে। আবার উদ্ভব হচ্ছে নতুন নতুন পেশার, প্রয়োজন হচ্ছে নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতার। সময়ের চাহিদা মিটাতে ও বৈশ্বিক পরিবর্তশীলতায় এই সমাজের সাথে তাল মিলাতে। তাই চাহিদা মিটাতে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব হতে থাকে। তার সাথে নতুন দক্ষতায় গড়ে উঠা নতুন পেশার মানুষেরও তো দরকার। তাতে যে জাতি উদ্ভাবনী ও নতুন পেশায় সক্ষমতা দেখাতে পারছে ও সেই চাহিদা মিটাতে পারছে সে জাতি সার্বিক উন্নয়নে এগিয়ে থাকছে। এই এগিয়ে থাকার জন্য মূল হাতিয়ার হল মানসম্মত দূরদর্শী শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা। যে শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা সময়ের চাহিদামুখী কর্মী ও জনশক্তি তৈরী করতে পারবে। তার জন্য সমাজের পরিবর্তনশীলতায় শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনতে হয়। তাই প্রাথমিক ,মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে আনা হয়েছে ও হচ্ছে সময়োপযোগী নানা পরিবর্তন, যা ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ হতে কার্যকর করার সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে,যাতে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী মেধা নিয়ে দক্ষ কর্মী ও প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে। ডিজিটালাইজড বিশ্বের শ্রম বাজারে টিকে থাকতে পারে। এই ব্যাপারে ভাইস চ্যান্সলর প্রফেসর ড, মশিউর রহমান বলেন ‘শিক্ষাকে মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ছিল ৪৫৫টি, বর্তমানে অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ২২৬০টিরও অধিক। যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫ লাখের অধিক। দেশের উচ্চশিক্ষার এই বৃহৎ অংশের শিক্ষার্থীকে স্মার্ট যুগে টিকে থাকার জন্য তাকে ব্যক্তি সম্পদ হয়ে উঠার পাশাপাশি সামাজিক ও বৈশ্বিক সম্পদ হয়েও গড়ে উঠতে পারার জন্য উচ্চ শিক্ষক্রমে পরিবর্তন আনা জরুরি। তার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসুচিতে যেমন পরিবর্তন আনা হয়েছে। তেমনি চালু করা হয়েছে ১২টি সময়ের উপযোগী দক্ষতা ভিত্তিক পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি)। এতে কর্মসৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষ, যোগ্য, পেশাজীবী হয়ে উঠতে পারবে শিক্ষার্থীরা। যারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নতুন পেশার বাজারের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। যার জন্য স্নাতক (পাস) কোর্সেও আবশ্যক বিষয় হিসাবে আইসিটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন উদ্ভাবন করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে ১ম যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সূচনা করল ১ম শিল্প বিপ্লব। মানব দেহ সমতুল্য এই সমাজের বিকাশ গতিশীল হয়ে উঠে, তাতে আবার প্রায় শতবর্ষ পরে ১৮৭০ সালে যুক্ত হয় বৈদ্যুতিক শক্তি। এই বৈদ্যুতিক শক্তি শিল্প কল কারখানায় সহজ ও সূলভে শক্তির যোগান দিতে পারায় বেড়ে যেতে থাকল বড় বড় শিল্প কল কারখানা, উৎপাদনে আসল ব্যাপক পরিবর্তন, কি পরিমানে, কি মানে। যাকে বলা হচ্ছে ২য় শিল্প বিপ্লব। এসব বিপ্লবে দেখা গেল শ্রম বৈষম্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক কল কারখানা চালাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের কারণে, প্রযুক্তিগত জ্ঞান উপনিবেশিক মানসিকতার জন্য হাত ছাড়া না করার কারণে। অন্যদিকে শিল্প বিপ্লবকে এগিয়ে নিতে শিক্ষাকে শিল্প বিপ্লব উপযোগী করতে গিয়ে শিক্ষায় আনতে হল প্রযুক্তিগত জ্ঞান দিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন। সে পরিবর্তনে সামিল হতে না পারায় অনেক দেশ উৎপাদন ব্যবস্থায় ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ে যায়। তৈরী হতে থাকে জাতিতে জাতিতে বৈষম্য, মানুষে মানুষে বৈষম্য। একসময় সামাজিক পরিবর্তন ও মান উন্নয়নে পুঁজির চেয়ে প্রযুক্তিগত মেধা ও দক্ষতাই একটি জাতি এগিয়ে থাকার সূচক হিসাবে বিবেচিত হতে থাকে। তাই দেশে দেশে সময়ের দাবি মিটানোর উপযোগী শিক্ষার প্রসার ও বিস্তারে গুরুত্ব দেয়া বড় ইস্যু হয়ে উঠে। তাতে যারা বিচক্ষণ জাতি তারা মেধাকে মূল পুঁজি ধরে মেধা তৈরিতে , প্রযুক্তিগত জ্ঞান দক্ষতায় এগিয়ে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। স্বার্থের লোভ আর পুঁজির শোষণ ও আগ্রাসন ধরে রাখতে ও বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতার কৌশল ও জ্ঞান উন্নত দেশে আটকা পড়ে যায়। ধন নয়, পুঁজি নয় এই প্রযুক্তিগত মেধা শক্তি দিয়ে জাপানের মত ২য় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশের মতো অনেক দেশ উন্নত দেশের সারিতে ওঠে আসে। একসময় তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতাকে সাম্রাজ্যবাদের থাবা ও উন্নত দেশের পুঁজির গ্রাস থেকে সর্বকল্যাণময় করার ও সকল জাতির সম্পদ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই প্রয়োজনীয়তা মিটাতে তথা অবাধে তথ্য আদান-প্রদান, মেগাডাটা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় দুই দশক পরে উদ্ভাবন করা হল ইন্টারনেট, ১৯৬৯ সালে। এতে উৎপাদনকে স্বয়ংক্রিয় করতে ইলেক্ট্রনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উদ্ভাবন ও ব্যবহার বেড়ে যায়। যাকে ৩য় শিল্প বিপ্লব বলা হচ্ছে।
উদ্ভাবন আর ব্যবহারে এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় ‘পূজির’ চেয়ে মেধার প্রভাব ও কার্যকারিতা প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। এই ধারাবাহিকতায় শিল্প উৎপাদন ও তথ্য আদান-প্রদানের প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। তাতে নব নব প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার বেড়ে যায়। পারষ্পরিক আন্তঃসংযোগ ও সহজলভ্যতা বেড়ে গেল। আবশ্যক হয়ে উঠল পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম প্রযুক্তি, যা তাতে যুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ফিউশন তথা পারস্পরিক বিগডাটা ও তথ্যসম্ভার সঞ্চালনায় প্রযুক্তিগুলোর সার্বিকতা বেড়ে যায়। তাতে শিল্প উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকলে বিশ্বব্যাপী দ্রুত যে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে তাকে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব বলা হচ্ছে। যার নিজস্বতা প্রকাশ ঘটে এজাইল বিজনেস প্রসেস, রোবোটিকস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, ত্রিমাত্রিক থ্রিডি প্রিন্টিং, পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম, স্মার্টফোনের রিয়েল টাইম অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারনেট অব থিংস, যে কোনো জিনিসেই বিদ্যুৎ সংযোগযুক্ত কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন সিম কার্ড ও চিপ রেখে দূর নিয়ন্ত্রণ করা আইওটি, ম্যাসিভ কানেক্টিভিটি, ম্যাসিভ ট্র্যাকিং, দূর নিয়ন্ত্রণ, দুর্গম অঞ্চলে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, ফাইভ-জি অ্যাপ্লিকেশন, ড্রোন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ওগমেন্টেড রিয়েলিটি, বিগ ডেটা ও মেশিন লার্নিং, ক্লাউড ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ব্যাপকতা, চালকবিহীন গাড়ি, ফিনটেক ফাইনান্স বøকচেইন ও ভার্চুয়াল কারেন্সি, পেমেন্ট সিস্টেম, জৈবপ্রযুক্তি, ন্যানো টেকনোলোজি ও রিমোট সার্জারি ইত্যাদির মাধ্যমে। এ সবকিছু মিলে এই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের জয়যাত্রা শুরু হয়েছে সারাবিশ্বে।
এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে টিকে থাকার গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হল উদ্ভাবনী মেধা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা। তাই শুধু ফসলের জমি তৈরী করলে বা থাকলে হয় না, তা উন্নত জাতের ফসল উপযোগী করে তৈরী করা হচ্ছে কিনা তা দেখাটা জরুরি। তেমনি শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি তথা শিক্ষার রোডম্যাপও সময়ের চাহিদা অনুযায়ীই মেধা-মনন ও দক্ষতা তৈরীর জন্য করতে হয়। তাই এই সময়ের প্রযুক্তিগত মেধা ফলনের জন্য ও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার যোগান দিতে পারার জন্য উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষাক্রমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিবর্তন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাগুলো (পিজিডি)এর সংযোজন।
দেশের উচ্চশিক্ষার এই বৃহৎ অংশের মানোন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি তাদেরকে আরও দক্ষ, যোগ্য ও পেশাজীবী হিসেবে গড়ে উঠতে এরই মধ্যে উক্ত কোর্সসমূহের পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য চূড়ান্ত হয়েছে। ২০২৩-২০২৪ শিক্ষা বর্ষে কোর্সগুলো চালু করা হয়েছে।
পাঠ্যক্রম উন্নয়ন : বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক এর আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) কোর্সের ৩১টি বিষয়ের সিলেবাস পরিমার্জনের কাজ হয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা সম্মান কোর্সের খসড়া সিলেবাস প্রস্তুত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রদত্ত ‘আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই টেমপ্লেট) অনুসরণপূর্বক বিষয়ভিত্তিক কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে সিলেবাস পরিমার্জন সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন সিলেবাস তা যুক্ত করা হয়েছে। নতুন সিলেবাসে আইসিটি ও সফটস্কিলসহ কয়েকটি নতুন কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মো. মশিউর রহমান এক সাক্ষাতে বলেন, ‘এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নতুন কারিকুলামে পাঠদানের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। একই সাথে একটি পৃথক লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’ সমাজবিজ্ঞানী মাননীয় ভিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘এই কারিকুলামে ইন্ডাষ্ট্রি এবং একাডেমিয়ার মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে পৃথক এলএমএএস করে একটি সফটওয়্যার এবং একটি কনটেন্ট তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থীরা তাদের ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠের রিসোর্সগুলো সহজেই পাবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং বিএনকিউএফের কর্তৃক নতুন সিলেবাস প্রতিটি বিষয়ের ক্রেডিটমান নির্ধারণ করা হয়েছে।
একাডেমিক মাস্টার প্রণয়ন : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমকে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করার লক্ষ্যে নতুন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় আরও দক্ষতাসমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ লক্ষে একাধিক সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও সভার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবীদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি এ নিয়ে কাজ করেছে। একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও তা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
ব্লেন্ডেড এডুকেশন কর্মপরিকল্পনা : উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লর উপযোগী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে তৈরি হচ্ছে ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা, যা শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইন-অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করে। এ লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেকহোল্ডার হিসেবে জাতীয় টাস্কফোর্সের সাথে বেøন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনার খগড়া প্রণয়নে কাজ করেছে। এরইমধ্যে সারাদেশের ২২৫৭টি কলেজের জন্য ১০ বছরের কর্মপরিধি নির্ধারণ ও বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষকদের জন্য গবেষণা তহবিল প্রবর্তন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর অধিভুক্ত কলেজসমূহের শিক্ষকরা যাতে মানসম্মত গবেষণা পরিচালনা করতে পারে সে লক্ষ্যে একটি গবেষণা তহবিল গঠন করা হয়েছে। শিক্ষকদের নিকট থেকে প্রাপ্ত গবেষণা প্রস্তাবনাসমূহ মূল্যায়ণপূর্বক এরই মধ্যে এর প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা হয়েছে।
মঞ্জুরি কমিশন, কাউন্সিল ইত্যাদির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন সিলেবাস হবে প্রতিটি বিষয়ে কমপক্ষে ১৩২ ক্রেডিটের। সিলেবাসে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস, ইংরেজি, আইসিটি, সফটস্কিল সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীর জন্য অবশ্য পাঠ্য হবে। ২০টি শর্টকোর্স বাছাই করা হয়েছে,যা থেকে দুই একটি বিষয়ভিত্তিক অন্তর্ভুক্ত হবে। সংশ্লিষ্ট আরও কাজগুলো সম্পন্ন করে সিলেবাসটি পুস্তক আকারে মুদ্রণ করে সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে।
দেখার বিষয় হলো ‘জনশক্তি’ তৈরীর স্রষ্টা এবং মন ও মানবিকতার কারিগর শিক্ষক সমাজের মানসিক প্রস্তুতির সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং তাদেরকে এই সব শিক্ষাক্রমের উপযোগী করার প্রস্তুতির ব্যাপারে আর্থিক ও সামাজিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ কেমন তা। তাঁদের সামাজিক সক্ষমতা বাড়াতে না পারলে, মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে না পারলে এবং আর্থিক সক্ষমতায় অন্যান্য পেশার চেয়ে এগিয়ে রাখতে না পারলে উচ্চ শিক্ষায় ৪র্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী দক্ষ কর্মী ও জনশক্তি তৈরীর যে নতুন রোডম্যাপ বা শিক্ষাক্রম তৈরী করেছে তার কার্যকারিতা ও বাস্তবায়ন মাত্রার সূচকে অন্যান্য দেশের তুলনায় কতটুকুতে থাকতে পারবে তা নিয়েও ভাবতে হবে। গাড়ির মডেলকে শুধু উন্নত করলে হয় না, গন্তব্যে পৌঁছাতে পারার জন্য সেই গাড়ি যিনি চালিয়ে নিয়ে যাবেন জীবন-মান নিরাপত্তার জন্য তাঁকেও তো সেইভাবে সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। সেই প্রস্তুতির সাফল্যই হল কার্যক্রমটির নিয়ামক শক্তি।
সরকারিভাবে প্রথম বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর পালন হয়। যেখানে বিশ্ব সভ্যতা এগিয়ে আনায় এই শিক্ষক সমাজের অবদানের কথা স্বীকার করা হয়, তাঁদের মর্যাদা নিশ্চিতের কথা বলা হয়। আর স্ব স্ব প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকের পাশে গিয়ে শিক্ষার্থীটি প্রিয় শিক্ষককে উপহার দিয়ে তাঁর সুখ দুঃখের ভাগীদার হয়ে উঠার দিন।
দিনটি যথাযথ মর্যাদায় ‘বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি-বাকশিস’ চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পালিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষক সমাজ অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষাবান্ধব মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব মহিবুল হাসান নওফেল ও গেস্ট অব অনার সমাজবিজ্ঞানী জাতীয় বিশ্ব বিদ্যায়ের ভিসি, প্রফেসর ড. মশিউর রহমান, যিনি এই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমকে ঢেলে সাজিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জ্বালানীশক্তি শিক্ষক সমাজের জন্য কী ঘোষণা দিচ্ছেন তা শুনার জন্য ও জানার জন্য। আমাদের প্রত্যাশা তাঁদের হাত ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা ৪র্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী হয়ে রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়িত হয়ে উন্নত দেশে যেমন পরিণত হবে তেমনি তার কাÐারি শিক্ষক সমাজও আর্থিক ও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক