চন্দনাইশ প্রতিনিধি
চন্দনাইশ উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকা ধোপাছড়ি। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সেখানকার একটি ছড়াই যেন হাজারো মানুষের এগিয়ে চলায় প্রধান বাঁধা ছিল। পূর্ব ধোপাছড়ির শঙ্খমুখ, ক্যাম্পপাড়া, শামুকছড়ির ২ শতাধিক পরিবারের সদস্য, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, মুমূর্ষু রোগীর একমাত্র চলাচলের পথ ধোপাছড়ি ছড়ার মুখের বাঁশের সাঁকোটি ছিল মৃত্যু ফাঁদও। বর্ষা মৌসুমে পূর্ব ধোপাছড়িবাসীর একমাত্র চলাচলের সাঁকোটি পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন মানুষগুলো। নিজেদের আয়-রোজগারেও বাঁধাগ্রস্ত হন প্রতিনিয়ত। অবশেষে সেই দুঃখ যেন কিছুটা ঘুঁচে দেয়ার স্বপ্ন দেখাল উপজেলা পরিষদ। প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছড়ার উপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি কাঠের সেতু। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে কাঠের সেতুটি নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার ৫২ বছরে কয়েকজন সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রতিশ্রæতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেননি পূর্ব ধোপাছড়ির মানুষকে দেয়া প্রতিশ্রæতি। ১৯৭৩ সালে দোহাজারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভক্ত হয় ধোপাছড়ি ইউনিয়ন। পাহাড়ি এই জনপদে উপজাতি, ত্রিপুরা, মারমা, রাখাইন, রোহিঙ্গা, বাঙালি জনগোষ্ঠীর সম্মিলনে কয়েকটি গ্রামের ২ শতাধিক পরিবারের হাজারো মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল বাঁশের সাঁকো। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে গেলে স্থানীয়রা নিজস্ব অর্থায়নে মেরামত করে চলাচল সচল রাখেন। বর্ষা এলে ধোপাছড়ি খালের পূর্ব পাশের কয়েক গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। ধোপাছড়ি ছড়া ভাঙনের ফলে বিশাল খালে পরিণত হয়ে শঙ্খ নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খালের পূর্ব পাড় ভাঙনের মুখে পড়ে প্রায় বৃষ্টিতে বসতঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে।
সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তি হলেও ধোপাছড়িবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কিংবা পরিবর্তন হয়নি। এ ছড়ার উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এটি সময়ের দাবি ছিল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এ এলাকার শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গর্ভবতী নারী, মুমূর্ষ রোগী অকালে প্রাণ হারাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। পূর্ব ধোপাছড়ির সাথে ধোপাছড়ি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা সদর, দোহাজারীসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাচলের একমাত্র পথ ধোপাছড়ি ছড়ার উপর বাঁশের সাঁকোটি। একটি সেতু নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা। আপাতত কাঠের একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রæততার সাথেই সেখানে একটি স্থায়ী কংক্রিটের সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী জুনায়েদ আবছার চৌধুরী জানান, পূর্ব ধোপাছড়ির মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ঐ স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু সে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় উপজেলা পরিষদের সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে ধোপাছড়ি ছড়ার মুখে কাঠের একটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে ধোপাছড়ি ছড়ার মুখে কাঠের সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে এসেছে। দ্রæতই এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
তিনি জানান, ৯৭ মিটার দীর্ঘ ও ৩০০ ফুট লম্বা এবং ৭ ফুট প্রস্থের কাঠের সেতুটি নির্মাণের পাশাপাশি সেতুর দুই পাশে প্লাসিডিং দিয়ে খালের ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ২৩ লক্ষ টাকা প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হলেও ব্যয় কমিয়ে ১৬ লক্ষ টাকায় কাঠের সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে ১০ লক্ষ টাকার বেশি কাজ আরএফটি থেকে দেয়ার সুযোগ নেই। ২ দফায় বরাদ্দ দিয়ে পর্যায়ক্রমে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামি ১ থেকে দেড় মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলে উভয় পাড়ের মানুষ অনায়াসেই এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। এই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন অবাধে চলাচল করতে পারবে। ফলে পূর্ব ধোপাছড়ির সাথে ধোপাছড়ির মূল অংশসহ উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ উন্মুক্ত হবে। এই সেতুটির স্থায়িত্বকাল ১০ থেকে ১৫ বছর হবে বলেও তিনি মত দেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেন, পূর্ব ধোপাছড়িবাসীর প্রাণের দাবি ধোপাছড়ি ছড়ার উপর সেতু নির্মাণ। একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করেও সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না হওয়ায় উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দিয়ে সাময়িকভাবে কাঠের সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।