নিজস্ব প্রতিবেদক
এক শ্রমিককে ছুরিকাঘাত করার ঘটনায় ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে পণ্য ওঠানামা ও সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকে প্রায় ৩০০ কোটির মালামাল রাস্তায় পড়ে ছিল। সেই সঙ্গে সারাদিন বেচাবিক্রি না হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখিন হন ব্যবসায়ীরা। তবে শ্রমিকদের দাবির সাথে ব্যবসায়ীরা একাত্মতা ঘোষণা করায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মালামাল ওঠানামা ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়। জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ মালামাল লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য মো. মাসুদের সাথে এক পিকআপ চালকের কথা কাটাকাটি হয়। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে ওই পিকআপ চালক কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে এসে মাসুদকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনার খবর শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। সোমবার রাতে কিছুটা পণ্য ওঠানামা হলেও গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে মালামাল ওঠানামা ও সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ট্রাকে প্রায় ৩০০ কোটির মালামাল সারাদিন রাস্তায় পড়ে থাকে। কর্মবিরতির কারণে কোনো ধরনের বেচাবিক্রি না হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে মালের অর্ডার করে খালি হাতে ফেরত গেছেন। এ কারণে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় ব্যবসায়ীদের। তবে গতকাল মঙ্গলবার বিকালের দিকে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে বৈঠকের মাধ্যমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাণিজ্যিক এলাকায় এধরনের ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আহত মাসুদের অবস্থা খুবই খারাপ। এ ঘটনায় শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় সোমবার রাত থেকে আজ (মঙ্গলবার) সারাদিন খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মালামাল নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো রাস্তায় অলস দাঁড়িয়ে থাকে। বিকালে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠকের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
সিবিএ-নন সিবিএ সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব আবুল হোসেন আবু বলেন, কাজ চললে পেটে ভাত আসবে। শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
তিনি বলেন, আহত মাসুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। খাতুনগঞ্জের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, আড়তদার সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর ভাইসহ আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়েছি। চিকিৎসক বলেছেন, তাকে ১৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। অপারেশনের পর বর্তমানে তাকে সিসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পর তার অবস্থা কেমন তা জানা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
এদিকে বৃহৎ এই পাইকারি বাজার থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। আবার এখানকার আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা মালামাল পণ্যবাহী ট্রাকযোগে নিয়ে আসেন খাতুনগঞ্জের গোডাউনগুলোতে। এসব পণ্য ওঠানামায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাণিজ্যিক এলাকায় এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। কারণ শ্রমিকদের রাত-দিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। এ ঘটনার কারণে সারাদিন খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।