নিত্যপণ্যের বাজার মূল্যের লাগাম কোনভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছেনা। মৌসুমের সবজি বাজারে ভরপুর, তরকারির পসরা পুরো বাজার সবুজাময়। অথচ দাম শুনে অন্তর্জালা বেড়ে যাচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। এরমধ্যে কয়েকদিন আলু আর ডিমের বাজারে শীত নামার মত ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব লক্ষ করা গেলেও এখন আবারও সেই আগের জায়গায়। তরকারির দামের হিসাব করতে করতে বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম। মাছ-মাংসের কথা নাই বলা হল। চাল নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের চালবাজি নতুন না হলেও পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুদের মধ্যেও চালের দাম বাড়ানো পায়তারা সাধারণ মানুষকে ভীতগ্রস্ত করে তুলেছে। আমরা লক্ষ করে আসছি, ভোগ্যপণ্য বাজারে অস্থিরতার মাঝে কিছুদিন চালের বাজার স্থির ছিল। মানুষ আর যাই হোক চালের বাজার নিয়ে মোটামুটি স্বস্তিতে দিন কেটেছে। কিন্তু মিলের মালিকদের তা পছান্দ হচ্ছেনা। তারা এবার এক হয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার ফন্দিফিকির করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কৌশল হিসেবে তারা চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চাল সরবরাহ না করে মজুত করে রাখছেন। পাইকাররা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত চাল কেনার অর্ডার দিলেও চালের আড়তদার ও মিল মালিকরা সেই অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছেনা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা চাল নেই তাই কম বিক্রির নাটক সাজাচ্ছেন। এভাবে কৌশলে বাজারে চালের সরবরাহ সংকটের অজুহাতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। জানা যায়, সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত চালের মজুত রয়েছে। এমনকি পাইকারি ও খুচরা বাজারেও চালের কোন ঘাটতি নেই বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের সূত্র জানিয়েছে। এরপরও বাজারে দাম বেড়ে চলছে। মিল মালিক ও অসাধু চাল ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত সুকৌশলে চালের দাম বাড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, এক মাসের ব্যবধানে মিল পর্যায়ে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। বস্তুত সব নিত্যপণ্যের দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রশ্ন হলো, বাজারে যারা কারসাজি করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা যাদের, তারা কী করছেন? ২৬ আগস্ট ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যায়। ওই সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ফলন ভালো হওয়ায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধান-চালের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে; আমদানির দরকার নেই; চালের দাম সহনীয় পর্যায়েই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা থাকেনি।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় সেচ সংকট ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নিয়ে কৃষক চিন্তিত থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমনের ভালো ফলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ধান বিক্রি শুরু হলেও চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কয়েক বছর ধরেই এটি লক্ষ করা যাচ্ছে। যেহেতু ধান কাটার মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, সেহেতু সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে কোনো সন্দেহই থাকে না। এ চক্রের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বারবার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ না হওয়ায় বোঝা যায়, কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। অতীতে লক্ষ করা গেছে, দফায় দফায় শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও ভোক্তারা এর সুফল পায়নি। এ থেকেই স্পষ্ট সিন্ডিকেটের শেকড় কত গভীরে পৌঁছেছে। মানুষকে জিম্মি করে যারা অনৈতিক ব্যবসা করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেভাবেই হোক নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হবে। সামনে নির্বাচন। জানামতে, গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার যদি এভাবে অব্যাহত থাকে তবে সরকারের ভাবমুর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ইতোমধ্যে সরকার দেশের যে আকাশ ছোঁয়া উন্নয়ন করেছে, তা অনেকটা নিস্ফল হবে। আশার কথা সরকার আবারও ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ভালো ব্যবস্থা, কিন্তু এরপরও কথা থাকে বাজারের একটি স্থায়ী মূল্য ব্যবস্থাপনা জরুরি। যার যখন ইচ্ছে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিবে-তা কখনো মেনে নেয়া যায় না। এ অবস্থার অবসান হতে হবে। সরকার সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবেবাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে। সিন্ডিকেট নামধারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিলে কিছুটা হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে-এমনটি প্রত্যাশা দেশের ভোক্তা সাধারণের।