সীতাকুন্ড প্রতিনিধি
সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযানে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। হামলায় সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম, কাট্টলী সার্কেলের সহকারি কমিশনার ভূমি মো. উমর ফারুক ও সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি মো. তোফায়েল আহমেদসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তিন হামলাকারীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে পরিচালিত এই অভিযানে জঙ্গল সলিমপুর মৌজার বিএস ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত বিএস ৩৬০ ও ৩৬১ দাগের পাহাড় শ্রেণির এই জমিতে থাকা শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে হার্ট ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গাটি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু-এমং মারমা, মো. রাজীব হোসেন, এস এম এন জামিউল হিকমা, রাকিবুল ইসলাম, সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রফিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন। এছাড়াও জেলা পুলিশের ২ শতাধিক ফোর্স, র্যাব, আনসারসহ হাজারো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে গত বছর দখলদারদের উচ্ছেদ করে সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি খাস দশ একর জমি উদ্ধার করে হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে সময় প্রশাসন কর্তৃক সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কিছুদিন পর থেকে দখলদাররা পুনরায় উদ্ধারকৃত জমি দখল করে নেয়। পূর্বে উদ্ধারকৃত জমি আজ পুনরুদ্ধার করতে প্রশাসন আবারও অভিযান চালায়। অভিযানের শেষ পর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ কয়েকশত নারী পুরুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে প্রশাসনের উপর অতর্কিতভাবে বৃষ্টির মত পাথর ছুঁড়তে থাকে। এতে সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কাট্টলী সার্কেলের সহকারি কমিশনার ভূমি ও সীতাকুন্ড থানার ওসিসহ ২০ জন আহত হয়। অন্য আহতরা হলেন সীতাকুন্ড মডেল থানার পুলিশ সদস্য জামিল, রেজোয়ান ও রিজার্ভ পুলিশের ৬ জনসহ মোট ১০ জন এবং সীতাকুন্ড সহকারি কমিশনার ভূমি অফিসের ১০ জনসহ মোট ২০ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুত সরকারি অফিসের এক কর্মচারী বলেন, অতর্কিত হামলার ধরন এমন অবস্থা ছিল যে, তিনশত পুলিশ, আনসার ও র্যাব থাকার পরও দখলকারীরা ইট পাটকেল মারতে মারতে দুই মাইল ভিতর থেকে বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে আসে। যে যার মত করে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকে। আল্লাহ কোন রকম আমাদেরও সুস্থ নিয়ে আসছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও তাদের সতর্কতা ছিল খুবই নগন্য। দখলকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে উঠতে গিয়ে পিচ্ছিল পাহাড় থেকে পড়ে ও ইট-পাটকেলের আঘাতে অনেকে আহত হয়েছে।
সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে ফেরার পথে হঠাৎ কয়েকশত উশৃঙ্খল নারী পুরুষ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অতর্কিতভাবে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজায় দৃষ্টি থাকলেও দখলকারীদের মুহুর্মুহু পাথরের আঘাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এক সহকারি কমিশনার ভূমি ও আমিসহ বেশ কয়েকজন আহত হই। অতর্কিত ছোড়া পাথর আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এসে পড়ে। আহতরা সীতাকুÐ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। আমরা তাৎক্ষণিক তিনজনকে আটক করেছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. আলাউদ্দিন বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় হার্ট ফাউন্ডেশনের বরাদ্ধকৃত একটি জায়গা বুঝিয়ে দিতে আমরা সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। উচ্ছেদ অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরও কমতি ছিল না। আমরা উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে ফেরার পথে পাহাড়ের উপর থেকে হঠাৎ করে কোন কিছু বুঝে উঠার আগে মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। তাৎক্ষণিকভাবে পাথরের আঘাতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা স্যার, কাট্টলী সার্কেলের সহকারি কমিশনার ভূমি ও সীতাকুন্ড থানার ওসিসহ পুলিশ ও আমাদের অফিসের বেশ স্টাফ আহত হয়। আহতাবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় সিনিয়র স্যারদের সাথে কথা হয়েছে মামলা প্রস্তুতি চলছে।