সাঈদুল আরেফীন
মাত্র দশ বছর বয়স। অবুঝ নিষ্পাপ শিশু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের ¯্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল। রাসেল আর বড় হতে পারেনি। যারা আজ রাসেলের মতো দশ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু, নিশ্চয় লেখাপড়া করে হাসিখুশিতে দিন ভরিয়ে রাখে সেইসব শিশরা। ওদেরই মতো করে শেখ রাসেলও স্কুলে যেতো, হেসে খেলে বেড়াতো। বন্ধুদের নিয়ে পরিবারের সাথে সুন্দর করে দিন গুলো পার করতো। একটু সুযোগ পেলেই জাতির জনকের অত্যন্ত আদরের শিশু শেখ রাসেল বাবার সাথে সোহাগে আদরে মাতিয়ে রাখতো তার সময়গুলো। বাংলাদেশের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কনিষ্ঠ ভাই শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে নেই।আমাদের সবার চোখে ভাসে তাঁর সুন্দর মুখাবয়ব। সহজ সারল্য আর মায়াভরা শেখ রাসেল জন্মেছেন ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর ঐতিহাসিক বাড়িতেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর পৃথিবীর আলোয় আসেন। আজ যারা রাসেলের মতো ছোট্ট শিশু আছে তাদের মতোই শিশু রাসেলের সুন্দর দিন ছিলো। ধানমন্ডির বাড়িতেই সারাক্ষণ ঘুরঘুর করতো ছোট্ট রাসেল। সময় কাটাতো সুন্দর এক স্বপ্নের ভেতর দিয়ে। বাংলাদেশের বিখ্যাত এক পরিবারে জন্ম নিয়ে হয়তো শিশু রাসেল বড় হয়ে উঠতো অন্যসব শিশুদের মতো। লেখাপড়া, খেলাধুলা, মা বাবা ভাইবোনদের সাথে আনন্দ হৈহল্লার মধ্য দিয়ে পার করতে চেয়েছিলো তার অনাগত দিনগুলো। সেই ভালোলাগা ও আনন্দময় দিন আর আসেনি শেখ রাসেলের কাছে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেট শিশু রাসেলের সেই সুন্দর জীবনটি কেড়ে নিয়েছিলো। দেখতে দেখতে এবার আমরা শিশু রাসেলের আটান্নতম জন্মদিনের কাছাকাছি এসে পড়েছি। শিশু রাসেল বড় হলে এমননটি হতো। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র হিসেবে দেখা যায়, রাসেল বরাবরই বাবার সান্নিধ্যে থাকতে চেয়েছে। কখনো সখনো দেখা গেছে জাতির জনকের কন্যা বড়বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আঁচল তলে ঠাঁই নিতো। এই যে আদর আর মায়ামমতার সুদৃঢ় বন্ধনকে কীভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ঘাতকের বুলেট, ভাবতে বড়োই কষ্ট লাগে। শেখ রাসেলের মায়াময় জীবনের স্বপ্ন নিয়ে সারাদেশে গঠিত হযেছে অসংখ্য রাসেল স্মৃতি সংসদ। শিশু রাসেলের জন্মদিনকে সামনে রেখে সেই সংসদগুলো প্রতিবারের মতো এবার ও পালন করছে নানা আয়োজনে হরেক রকম অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের সকল শিশুরা শেখ রাসেলের জন্মদিনে নিজেদের মনটাকে ভরিয়ে দেয় আনন্দময় উৎসবের মাধ্যমে। শেখ রাসেলের মর্মান্তিক মৃত্যু কোন শিশু যেমন মেনে নিতে পারেনি। যে কোন সূস্থ মস্তিষ্কের বিবেককবান নাগরিকদের মনেও কষ্টের জ্বালা ছড়িয়েছে শেখ রাসেলের মৃত্যু। ইতিহাস থেকে আমাদের জানতে হবে, এদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা জাতির জনক ও তাঁর পরিবারকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিলো। শত্রুপক্ষ ষড়যন্ত্র করেও সফল হতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির জনকের কন্যা শেখ রাসেলের বড়বোন এখন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। শেখ রাসেলের আদর ভরা মায়াময় স্মৃতি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট্ট শিশুদের মাঝেই খুঁজে ফিরেন তাঁর নিষ্পাপ ছোটভাই শেখ রাসেলকে।
বাংলাদেশের কোটি জনতার বুক চিরে রাসেল এর সুন্দর স¦প্নিল কচিমুখ আজ ভেসে ওঠে বারবার। অন্য সব দিনের মতো ১৯৭৫ সালের চৌদ্দই আগস্ট ঢাকার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে শিশু রাসেল ও বাবার আদরে মায়ের ¯েœহে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বিছানায়। কে জানতো পরিবারের অন্য সবার সাথে ঐদিনই দিবাগত রাত পনেরোই আগস্ট ইতিহাসের কালো রাত নেমে আসে শেখ রাসেলের জীবনে। পনেরোই আগস্ট শেখ রাসেল বারবার বাবা মায়ের কাছে ছুটে যেতে চেয়েছিলো, ঘাতকের দল সে সুযোগ তো দেয়নি, উল্টো নির্মম বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেলো অবুঝ রাসেলের প্রাণ। বড়ো কষ্টে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে রাসেলের আত্মাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। তাই তো আমরা শেখ রাসেলকে মন উজাড় করে স্মরণ করি আজ। বাংলাদেশের হাজারো শিশুর সাথে মিলিত কন্ঠে বলি, রাসেল তুমি বেঁচে আছো সব শিশুদের হৃদয়ের মধ্যি খানে।
শেখ রাসেল সবসময় বাবার হাত ধরে ঘুরতো পছন্দ করতো। দেশ স্বাধীনের পরে বঙ্গবন্ধুর সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাসেল ও থাকতো বাবার সাথে। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে কাছে না পাওয়াতে ছোট্ট রাসেল বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যেই থাকতো চাইতো সারাক্ষণ। শিশু রাসেল বেঁচে নেই বটে তাঁর জন্মদিনে মুখর হয়ে সাড়ম্বরে পালন করছে দেশের সবখানে শিশুরা। শেখ রাসেলের জন্মদিনে সুন্দর সুশ্রী সারল্যভরা মুখখানিতে ভেসে উঠবে জাতির জনকের প্রতিচ্ছবি। আজকে রাসেলের বয়সী ছোট্ট সোনামণি শিশুরা বাবার হাত ধরে ছুটে বেড়িয়ে রঙিন সুন্দর দিন যাপন করবে সেই স্বপ্নের ভেতর দিয়ে। রাসেল ও চেয়েছিলো হাঁটি হাঁটি পা পা করে ওর জীবনটা স্বপ্নময় করে তুলতে। রাসেলের সেই স্বপ্নময়তায় বাংলাদেশের শিশুরা বেঁচে থাকবে। গড়ে তুলবে সুন্দর শান্তিময় বাংলাদেশ, শেখ রাসেলের জন্মদিনে এই স্বপ্নটুকুই জেগে উঠুক বাংলাদেশের সব শিশুদের মাঝে। শিশু রাসেলের স্বপ্নিল সুন্দর সম্ভাবনার মাঝে শেখ রাসেলের জন্মদিনে একটা সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের আগামীদিনের নাগরিক রূপে শিশুরা গড়ে উঠুক এই প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
লেখক : কবি, শিশুসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক