শুল্ক না দিয়ে রোলস রয়েস নিয়ে অনিয়ম

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিলাসবহুল সেই রোলস-রয়েস গাড়ি আমদানিকারককে ৫৭ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করে গাড়িটি খালাস নেওয়ার আদেশ দিয়েছে। সবমিলে গাড়িটি খালাস নিতে হলে জরিমানা, শুল্ক-করসহ গুনতে হবে ৮৫ কোটি টাকা। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে জব্দ হওয়া এই গাড়ি এখন আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে। গাড়িটি জব্দ করার পর গত ১২ অক্টোবর কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান এ সংক্রান্তে একটি আদেশ জারি করেন।আদেশে ৩০ দিনের মধ্যে শুল্ক-কর ও দুই ধরনের জরিমানা পরিশোধ করার কথা বলা হয়। তবে আমদানিকারক চাইলে কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রাইব্যুনালে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাবেন।
তথ্যমতে, বিচারাদেশ অনুযায়ী আমদানিকারককে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা অর্থদন্ড আরোপ করা হয়। বিমোচন জরিমানা আরোপ করা হয় ৪০ লাখ টাকা। আর শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা না পাওয়ায় গাড়ি খালাসে শুল্ক-কর দিতে হবে ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
কাস্টমসের তথ্যমতে, যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত রোলস-রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটি ২০২১ সালে তৈরি। এ গাড়ির সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৬ হাজার ৭৫০। মডেলের নাম কালিনান এসইউভি। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করলেও বিচারাদেশ অনুযায়ী অবৈধভাবে খালাস করে নেওয়া ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য রাখায় এ শুল্ক-কর ও জরিমানা গুনতে হচ্ছে আমদানিকারককে। গত এপ্রিলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করেছিল চট্টগ্রাম ইপিজেডের হংকং ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেড। আমদানির পর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ (ইপিজেড) এলাকায় নেওয়া হয়। এরপর শুল্কায়নের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হয় কাস্টম হাউসে। তবে শুল্কায়নের আগেই গত ১৭ মে গাড়িটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরের ঢাকার বারিধারার বাসায় সরিয়ে নেওয়া হয়। এ খবর জানতে পেরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে গাড়িটি জব্দ করে।
বিচারাদেশ অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করলেও শুল্কায়ন হওয়ার আগে অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের সুযোগ না থাকলেও প্রজ্ঞাপনের নিয়ম লঙ্ঘন করে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিজস্ব বাসভবনে গাড়িটি রাখা হয়েছে। আবার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়নি। এ কারণে আমদানিকারক এ গাড়িতে শুল্ক-কর অব্যাহতি পাওয়ার সুযোগ নেই বলে বিচারাদেশে বলা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফখরুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া আমদানি করা গাড়িটি অবৈধভাবে অপসারণ করায় জব্দ করা হয়েছিল। এরপরই তদন্ত করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়।
এদিকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস লিমিটেডের ৯০ শতাংশ শেয়ার অনন্ত গ্রæপের। বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার হংকংভিত্তিক ব্রিলিয়ান ওশেন ট্রেডিং লিমিটেডের।
অন্যদিকে অনন্ত গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহিরের এই বিষয়ে বক্তব্য হচ্ছে, ‘বেপজার অনুমোদন নিয়েই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করেছি। মালিকানা ও নাম পরিবর্তিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন একই। আমদানির পর শুল্ক কর্মকর্তারা গাড়িটি পরিদর্শনও করেছে। গাড়িটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় বিমা দাবি করতেই সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে জানিয়ে ওয়ার্কশপে নেওয়ার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।’ এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে তিনি জানান।
তথ্যমতে, কাস্টমস আইন ১৯৬৯ এর ৯, ১০, ১৬, ১৮, ৮০ ও ১১১ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমানের সই করা আদেশে জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটসকে ৫৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
আদেশে বলা হয়, রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবেদন করলেও জেড অ্যান্ড জেড ইনটিমেটস শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। ফলে জরিমানা ছাড়াও তাদের শুল্ক বাবদ দিতে হবে প্রায় ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আমদানি নথিতে ৬৭৫০ সিসির গাড়িটির দাম দেখানো হয়েছে ২ লাখ ডলার।