বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর সাথে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। পরে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রুমা উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে আর্থা পাড়া ও বাছলাং পাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আতঙ্কে কয়েকটি পাড়ার শতাধিক নারী-পুরুষ রুমা উপজেলা সদরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন।
জানা গেছে, কেএনএফ’র সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এ সময় সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই কেএনএফ’র এক সদস্য নিহত হন। গতকাল রবিবার সকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। তার গায়ে কেএনএফের পোশাক পরা ছিল। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পরে একটি বন্দুক ও ৭০টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
জনপ্রতিনিধিরা জানান, উদ্বেগ-আতঙ্কে স্থানীয়রা বাড়িঘর ছেড়ে রুমা সদর ছাড়াও বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। রুমা সদরে আশ্রয় নেওয়া মারমারা জানান, কয়েকদিন ধরে এলাকায় কেএনএফের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। পাড়াবাসীরা কেএনএফ সদস্যদেরকে নিজেদের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। একপর্যায়ে এলকার বাসিন্দাদের পাড়া ত্যাগ করার জন্য কেএনএফ সদস্যরা নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাদের বিপদ হতে পারে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর স্থানীয়রা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকেন।
জানা গেছে, বম ও মারমাদের পাঁচটি পাড়া থেকে লোকজন অন্যত্র চলে গেছে। পাড়াগুলো হচ্ছে পাইন্দু ইউনিয়নের হ্যাপিহিলপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, আর্থাপাড়া, মুননুয়ামপাড়া ও মুয়ালপিপাড়া। এসব পাড়ার বাসিন্দারা জানান, চার-পাঁচ দিন ধরে এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফ’র গোলাগুলি চলছিল।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা জানান, কয়েক দিন ধরে হ্যাপিহিলপাড়া, বাসত্লাংপাড়া, আর্থাপাড়া, মুননুয়ামপাড়া ও মুয়ালপিপাড়ায় কেএনএফ সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন ও ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের সদর দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেএনএফের অত্যাচার ও নির্যাতনে পাড়াগুলো থেকে বম ও মারমা বাসিন্দারা বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা রুমা উপজেলা সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে অবস্থান করছেন। তাদেরকে সেনাবাহিনী খাবার, শীতবস্ত্র, চিকিৎসাসেবা ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র প্রদান করছে।
মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে আশ্রয় নেওয়া হ্লাথোয়াইচিং মারমা জানান, তারা মুয়ালপিপাড়ায় ৭১টি বম ও ৫১টি মারমা পরিবার একসঙ্গে বাস করেন। শনিবার থেকে পাড়ায় কেউ নেই। মারমারা উপজেলা সদরে এসেছে। বমরা কোথায় আশ্রয় নিয়েছে তা তার জানা নেই।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন শিবলি জানান, আতঙ্কে রুমা উপজেলায় আশ্রয় নেওয়া শতাধিক নারী-পুরুষকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
রুমা থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, কেএনএফ’র সশস্ত্র সদস্যরা পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছেন- এমন খবরে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এসময় অস্ত্রধারীরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গুলিবিনিময়ের পর আহত বেশ কয়েকজন কেএনএফ সদস্য সেখান থেকে পালিয়ে যান। পরে গতকাল রবিবার ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে কেএনএফের এক সদস্যের মরদেহ পায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এছাড়া এসময় সেখান থেকে অস্ত্র-গুলি পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সাল থেকে পাহাড়ে বম স¤প্রদায়ের কিছু বিপথগামী যুবক কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে এই সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তুলেন। আর তাদের নির্মূলে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত ৯ অক্টোবর থেকে জঙ্গি ও কেএনএফের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত শনিবার পাইন্দু ইউনিয়নে বন্দুকযুদ্ধ হয়।