রিভিউ বোর্ডের শুনানীতে কমছে গৃহকর উত্তাপ

24

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বর্ধিত গৃহকর নিয়ে অসন্তোষের মাত্রা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলো। করদাতা সুরক্ষা পরিষদ নামক সংগঠনের নেতৃত্বে সরগরম ছিলো নগরীর বিভিন্ন প্রান্তর। প্রথম থেকেই করের আওতা বাড়ালেও করের পরিমাণ না বাড়ানোর ঘোষণা ছিলো সিটি মেয়রের। তা জনগণের মাঝে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। সবশেষ নিজে উপস্থিত থেকে শুনানির মাধ্যমে করদাতাদের মতামতের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া অসন্তোষ নিরসন করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে বিষয়টিকে কালো আইন বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে দেখছে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ।
গত ১৪ ডিসেম্বর নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের গৃহকরের আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ আপিল বোর্ডের সদস্যরা। এই সময়ে ১৪৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। আপিলে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ করদাতাই সন্তোষ্টি প্রকাশ করেছেন। একইভাবে গত বুধবার মেয়রের উপস্থিতিতে পাহাড়তলী নয়াবাজার মোড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে চসিক রাজস্ব বিভাগের ৬নং সার্কেলের রিভিউ বোর্ডের গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৫০টি হোল্ডিংয়ের নোটিশের মধ্যে ১৫৭টি হোল্ডিংয়ের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়।
ওইদিন আগের প্রদেয় করের কাছাকাছি নতুনভাবে কর নির্ধারণ করা হয়। আপিল শেষে করদাতার মতামতকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এখন থেকে করদাগণ আর বিভ্রান্ত হবার সুযোগ থাকবে না। করদাতাদের উপস্থিতিতে রিভিউ বোর্ড করদাতাদের ইচ্ছা মাফিক কর নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে সকলেই খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন’। মেয়র আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে যে কর মূল্যায়ন করা হয়েছিল তাতে অনেক অসঙ্গতি ছিল। যার কারণে নগরবাসী আন্দোলন শুরু করলে তা স্থগিত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর ২০২২ সালে তা পুনরায় চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসে, যে কারণে আবার কর আদায়ের কাজ শুরু করা হয়। কর মূল্যায়ন ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দূর করার জন্য তিনটি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। তিনি বলেন, আপিল বোর্ডে আপিল করলে তা শুনানীর মাধ্যমে সহনীয় পর্যায়ে কর নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি সার্কেলে মেয়রের উপস্থিতিতে গণশুনানীর পদক্ষেপ গ্রহন করলে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে করদাতারা আপিল শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন। কর দাতাদের নিজেদের মতামত অনুযায়ী আপিল বোর্ড তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর নির্ধারণ করে দিলে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্যদেরকেও আপিলে অংশ নেয়ার আহŸান জানান মেয়র।
নিয়মিত কর প্রদান করে আমাকে সহায়তা করুন আমি একটি সুন্দর নগরী উপহার দেবো- এমন আহŸান জানিয়ে মেয়র আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। গৃহকরের উপর নির্ভর করে নগরীর উন্নয়ন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়াও কর্পোরেশন কাজের আওতার বাহরে ৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪৬৩টি ফোরকানিয়া মাদ্রসা ও ৪১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪টি মাতৃসদন ও জেনারেল হাসপাতাল পরিচালনা করতে ব্যাপক ভর্তুকি দিতে হয়। যার ফলে চসিককে স্বাবলম্বী করাটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আগে সরকার থেকে যে থোক বরাদ্দ পাওয়া যেত তাও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে চসিকের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার পূর্বদেশকে বলেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা খেয়েছি, জেলে গিয়েছি। গত সপ্তাহে জামিনে বের হওয়ার পর গতকাল (বুধবার) কমিটির সবাইকে নিয়ে মিটিং করেছি। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিক্রমা হবে, উঠান বৈঠক হবে। একটি ‘সংগ্রাম’ উপ-কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারা মূলত আমাদের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করবে’।
সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে করদাতাদের সর্বোচ্চ ছাড় দিচ্ছে। করদাতার মতামতের ভিত্তিতে করা মূল্যায়ন করছে। এ বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল আবছার বলেন, ‘১৯৮৬ সালের কালো আইনটিকে বাস্তবায়নের জন্য মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে রাখার কৌশল এটি। প্রথম থেকে চট্টগ্রামবাসীর দাবি ছিলো দৈর্ঘ্য প্রস্থ গুণ করে কর ধরতে হবে। ভাড়ার উপর আয়কর তো দিচ্ছি, আবার একই আয়ের উপর গৃহকর কেনো দিব? মানুষকে এসব বিষয়ে পরিষ্কার করছে না। ফায়দা হাসিলের জন্য লোক দেখানো কৌশল ছাড়া এসব কিছু না’।