যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও আর্জেন্টিনা দুই ঘটনায় দৃশ্যপটে ৩ দেশ

24

বিশেষ প্রতিনিধি

মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া দেখে বিস্মিত এবং খুব উৎসাহিত আর্জেন্টিনা। এতটা আগ্রহী যে দুই দেশের সম্পর্ক তৈরিতে বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আগ্রহ জানিয়েছে। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সমর্থনের মাত্রা দেখে দেশটি অভিভ‚ত। সমর্থনের ঝড় তোলা আবেগ দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতি-নির্ধারক মহল পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে। আবেগের ঢেউ এতটা প্রবল ছিল বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশে ফিরে আর্জেন্টিনা দল যে বিস্ময়কর সংবর্ধনা পেয়েছে সেখানেও বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানান। প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দেজও বাংলাদেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের পতাকাসহ টুইট করে অভিনন্দন জানান। সে দেশের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মানুষের মধ্যকার এ বন্ধনকে বর্ণনাতীত বলে উল্লেখ করে বলেন, “আজ দুই দেশের পতাকা এখানেও উড়ছে। আসুন এই বন্ধন আরো গভীর করি।”
সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বকাপ আবেগ যেন নিয়ে এল নতুন এক বার্তা। এটি সাম্প্রতিক সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ভালো প্রতিক্রিয়া।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক একটি ঘটনা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে যে বিতর্ক চলছে তার সাথে রীতিমত স্বীকৃতি দিয়ে যুক্ত হয়ে গেল রাশিয়া। এক বিবৃতিতে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ধরনের বিবৃতিকে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকমহল নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করেন।
রুশ দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়, “কিছু দেশ, যারা নিজেদের উন্নত গণতন্ত্র বলে দাবি করে তারা অন্য সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শুধু হস্তক্ষেপই করেনা, এমনকি ব্ল্যাকমেইলও করে।”
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো এ স্বীকৃতিতে বলা হয় রাশিয়া কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনা।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতায় কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা যখন অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন সে সময় ঢাকায় রুশ দূতাবাসের এ বিবৃতি আসে। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা না হলেও এটা স্পষ্ট যে, আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোকে এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখযোগ্য একটি বক্তব্য হলো- “যে সব দেশ নিজেদের বিশ্বের শাসক মনে করে তারা যদি কোন দেশকে পছন্দ না করে তখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার নামে সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রাশিয়ার এমন প্রতিক্রিয়া ও কড়া অবস্থানের পেছনে প্রথম কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক, অন্যটা রাজনৈতিক। বাংলাদেশ রুশ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে এখনে রুশ স্বার্থ আছে। আবার রাজনৈতিক বা শাসন ব্যবস্থার দিক থেকেও রুশ পছন্দের ব্যাপার আছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ কেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার এ পাল্টা-পাল্টি অবস্থা এখন সংশ্লিষ্ট সকলের মনোযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে আর্জেন্টিনার সম্পর্কের বন্ধন আরও কতটা গভীর হওয়ার সুযোগ আছে তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকা আর্জেন্টিনার এ আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনেকেই মনে করেন ফুটবলকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে আবেগপূর্ণ সমর্থন তা সে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। এর মাধ্যমে আর্জেন্টিনার মানুষ বাংলাদেশকে চিনেছে।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় এবং বাংলাদেশের বিশেষ সমর্থনের একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন্দ্রিক রাশিয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার নানা দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে মনোযোগ ও বিশ্লেষণ চলছে।