রাহুল দাশ নয়ন
সম্মেলনের আট মাস পার হলেও মহানগর ও উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। হবে হবে বলেও হচ্ছে না এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি। পদপত্যাশী নেতারা কমিটি পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়মিত ধর্ণা দিলেও সুফল মিলছে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় কমিটির গুরুত্ব বাড়লেও টনক নড়ছে না কেন্দ্রের। আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘মাইম্যান’ প্রাধান্য দিতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত কমিটি বঞ্চিত যুবলীগ। সিভি জমা, সম্মেলন ও প্রতিনিধি সভা করেও মহানগর ও উত্তর জেলায় যোগ্য নেতা বেছে নিতে পারেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল পূর্বদেশকে বলেন, ‘মহানগর ও উত্তর জেলার কমিটি আমরা দ্রæত দিয়ে দিব। কবে নাগাদ কমিটি দেয়া হবে এটি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। কমিটি করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয় হওয়া না হওয়ার প্রভাব যুবলীগে নেই। আমরা যোগ্যদের স্থান দিয়ে সহসাই কমিটি দিব।’
নেতাকর্মীরা জানান, উত্তর ও মহানগর আওয়ামী লীগের পাঁচ শীর্ষ নেতার পছন্দ অপছন্দে আটকে আছে যুবলীগ। এই পাঁচ নেতা নিজেদের ব্যক্তিদের কমিটিতে আনতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এসব নেতাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের দেখা যায়। কিন্তু একই নেতার অনুসারী একাধিক ব্যক্তি যুবলীগের পদপ্রত্যাশী থাকায় নেতারাও আছেন বিপাকে। ‘শ্যাম রাখি না ক‚ল রাখি’ অবস্থায় নেতারা। মূলত নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় কমিটি ঘোষণায় দেরি হচ্ছে বলে জানা যায়। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়হীনতার প্রভাব যুবলীগে নেই বলেই জানিয়েছেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর ও উত্তর জেলা যুবলীগের পদপ্রত্যাশী দুই নেতা বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েই কমিটি হয়েছে। উত্তর ও মহানগরের ক্ষেত্রেও তাই হবে। এই দুই ইউনিটে পাঁচজন আওয়ামী লীগ নেতার মধ্যে সমন্বয় না হলে কমিটি গঠন আরও দেরি হবে। জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করার মতো চ্যালেঞ্জ নিবে না কেন্দ্র।’
জানা যায়, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী নেতারা এখন তাঁর ছেলে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সাথে আছেন। যে কারণে ব্যারিস্টার নওফেলের সুদৃষ্টি নিয়েই কমিটিতে আসতে মরিয়া একটি পক্ষ। যদিও এ পক্ষের একাধিক নেতা মাঠে আছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনও এবার ভাগ বসাতে চান যুবলীগ। যুবলীগের গত কমিটিতে নিজের অনুসারী না থাকায় এবার কোনভাবেই ছাড় দিতে চাইছেন না তিনি। মহানগরে নাছির ও নওফেল বলয়ের কমপক্ষে ছয়জন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। একইভাবে উত্তর জেলার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালামের পছন্দ প্রাধান্য পাবেন। এই তিন নেতার নিজ এলাকার বেশ কয়েকজন নেতা যুবলীগের পদে আসতে তৎপর রয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ২৯ মে হাটহাজারীর পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। পরদিন মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয় নগরীর কিং অব চিটাগং কমিউনিটে সেন্টারে। দুটি সম্মেলন শেষেই পদপ্রত্যাশী নেতাদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল। পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে সমন্বয় না হওয়ায় ঢাকা থেকেই কমিটি ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান পরশ।