মনাম এর বৈঠকখানা

35

মনসুর নাদিম

শীতে আমাকে জমাইতে না পারিলেও বিস্তর কথা জমিয়া গিয়াছে। কোনটা ছাড়িয়া কোনটা ধরিব দিশা পাইতেছিনা। তবে পহেলা অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাই এগারোতম বর্ষে পদার্পন করা দৈনিক পূর্বদেশ পরিবারকে। হাঁটি হাঁটি পা পা করিয়া যুগের চৌকাঠে কদম রাখিয়াছে প্রিয় পত্রিকা পূর্বদেশ ইহা কী কম কথা ? আমি এই পত্রিকার সার্বিক সফলতা কামনা করি।
গুলবদনের স্ট্রং ডায়রিয়া হওয়ায় তাহাকে লইয়া ফৌজদার হাট ডায়রিয়া হাসপাতালে গিয়া বুঝিলাম “ তামাম সঙ এর একই রঙ”। মেডিকেলে একটা সিট পাইতে নেতা কিংবা বড়ভাই লাগে এইখানে সিট তো পাইলাম মাগার বেড সিট চাদর কিংবা কম্বল পাইতে বেশ ঘাম ঝরাইতে হইল। বড় বিবি গুলবদনের এই ছুরতের স্ট্রং ডায়রিয়া গত সাত বছর আগে একবার হইয়াছিল। এই ডায়রিয়া ত্রিশ মিনিটে রোগীকে যমে মানুষে টানাটানি অবস্থা করিয়া দেয়। গুলবদনের অবস্থাও লবেজান ছিল। দ্রæত খিঁচুনি আসিয়া মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করিতে থাকিলে মেহেরজান হারুর মা হাত-পা মালিশ করিতে করিতে কলেমা পড়িতে লাগিল। এই ছুরতের পরিস্থিতিতে আমি দেখিলাম গুলবদনের চক্ষু স্থির হইয়া একেবারে সাদা হইয়া গিয়াছে বিলকুল মরা মানুষের চোখের মতো। দিলের ধড়কন থামিয়া যাইবার উপক্রম। তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিয়া যাহা ছিল সবটাই জামেয়ার বাক্সে ঢালিয়া দিলাম। সাথে সাথে নিথর হইয়া যাওয়া গুলবদনের শরীরটা নড়িয়া উঠিল। আমার মুর্শেদ কেবলা কহিয়াছিলেন- ইয়ে কারামাত কা বাক্স হ্যাঁয়। সত্যি সত্যি প্রমাণ পাইলাম এটা কারামতের বাক্স। কারন চোখের সামনে গুলবদনের নিষ্প্রাণ দেহে প্রাণ ফিরিয়া আসিতে দেখিয়াছি। আরও অনেক মছিবত হইতে আল্লাহপাক উদ্ধার করিয়াছে এই কেরামতের বক্সের উছিলায়।
খেলা হইবে খেলা হইবে বলিয়া রাজনীতিতে হাওয়া বহিতেছে। কাতারে বিশ্বকাপ চলিতেছে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকদের গায়ে জার্সি শোভা পাইতেছে। ঘরের ছাদে পতপত করিয়া বিদেশী পতাকা উড়িতেছে। আমি তাজ্জব বনিয়া যায় মানুষের পাগলামি দেখিয়া। কোথায় আর্জেন্টিনা কোথায় ব্রাজিল তাহারা আমাদের দেশের নামও জানেনা। ১৯৭৮ সাল হইতে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার কোন দূতাবাস নাই। এইবার নতুন করিয়া আবার দূতাবাস চালু করিবার আরজু প্রকাশ করিয়াছে তাহারা। এই মুল্লুকের বাড়ি ঘরের ছাদের উপর যেই হারে বিদেশি পতাকা নির্লজ্জতা হাওয়ায় ছড়াইতেছে, তাহা আর কোন মুল্লুকে নাই। আমরা আসলে জাতি হিসেবে অতি আবেগি। বিদেশপ্রীতি আমাদের এতই প্রকট যে, একমাত্র মুরগি ছাড়া তামাম কিছু বিদেশি চাই। আমাদের ঘরের ফ্যাসাদেও তাহাদের ডাকিয়া আনি, ফয়সালা করিয়া দিতে বলিয়া থাকি। কেহ জিজ্ঞাসা করিলে বলি চা খাইতে আমন্ত্রণ জানাইয়াছি। প্রবাস জীবনে দেখিয়াছি ভারতীয়রা তাহাদের ভাষায় একজন আরেকজন কে ধুইয়া ফেলিতেছে। ভাষা না বুঝিলেও তর্জনে-গর্জনে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বোঝা যায় কোনটা ঝগড়া আর কোনটা আলাপ।জিজ্ঞাসা করিলে কহিয়া থাকে না কিছু না এমনি আলাপ করছিলাম’। আর দুইজন দেশীভাই ঝগড়া করিলে পাকিস্তানি/ভারতীয় কলিগ জমা হইলেই দেশি ভাইয়েরা কী হইয়াছে, কে কাহাকে কী গালি দিয়াছে তামাম কিছু এ টু জেড তরজুমা করিয়া বয়ান করিয়া থাকে। আর তাহা শুনিয়া পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান কলিগেরা মুখ টিপিয়া হাসিয়া কহিয়া থাকে-‘’ ছোড়ো ইয়ার, ইয়ে ছোটি ছোটি বাত মে আপস Ð মে লড়ো মাত (বাদ দাও দোস্ত এই ছোট ছোট কথায় নিজেদের মধ্যে লড়াই করো না)। আমি এই সমস্ত কাঔদ্ব দেখিয়া মর্মাহত হইতাম। ভাবিতাম আমার এই দেশি ভাইয়েরা কতই না সহজ-সরল। নিজেদের আত্মসম্মানবোধ টুকুও বালিশের তলায় রাখিয়া আসিয়াছে। করুণা হইত তাহাদের প্রতি ভাবিতাম তাহারা অশিক্ষিত সহজ-সরল মানুষ। দেশে আসিয়া দেখি যাহারা রাষ্ট্র পরিচালনার খোয়াবে বিভোর, যাহারা আইন প্রণয়ন করিয়া থাকেন, জনগণের কল্যাণ চিন্তায় যাহাদের দুই চোখের পাতা এক করিতে পারেন না, তাহারাই কথায় কথায় বিদেশিদের চা খাওয়াইবার বাহানায় ডাকিয়া সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করিয়া থাকে। সরকার মানে দেশ। সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা তাহারা করিতেই পারেন। ইহা গণতান্ত্রিক অধিকার। মাগার শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাইবার জন্য যাহারা বিদেশিদের ডাকিয়া অসত্য কথা কহিয়া আপনা মুল্লুকের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করিতেছে তাহাদের কী বলা যায় ? বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করিয়া, ভুয়া চ্যানেল খুলিয়া, ইউটিউবার এর অপপ্রচার / প্রোপাগান্ডায় নির্ভর করিয়া ক্ষমতায় যাওয়ার খোয়াব খোয়াবই থাকিয়া যাইবে। বিদেশিরা নিজ স্বার্থ আগে দেখিবে। অতীতে এই মুল্লুকে মীরজাফর জগত শেঠদের মদদে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গোটা দেশ দখল করিয়া লইয়াছিল। বৃটিশদের নাগপাশ হইতে বাহির হইয়া আমরা পাকিস্তানিদের ইসলামী জালে আটকাইয়া ছিলাম। আজ আমরা স্বাধীন। মাগার আত্মমর্যাদা , আত্মসম্মানবোধ কোনটাই অর্জন করিতে শিখিলাম না। অনেকে বলিয়া থাকেন অসত্য কথা কহিবেন না। আচ্ছা অসত্য মানে কী ? সত্যের বিপরীত শব্দ মিথ্যা। সুতরাং যাহা অসত্য তাহা মিথ্যা। একদা মেহেরজান জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, আচ্ছা সত্য আর বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য কী ? আমি কহিলাম- সিম্পল, যেমন খোকা তোমার ছেলে এইটা হইল সত্য। আর খোকা আমার ছেলে এইটা হইল বিশ্বাস’’। আমার জবাবে সেইদিন মেহেরজান বেজার হইয়াছিল কিনা জানিনা কারন সেইদিন মেহেরজান খামোশ হইয়া গিয়াছিল। বাংলাদশে সত্যিকারের রাজনীতিবিদের আকাল পড়িয়াছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কহিয়াছিলেন, দলের পক্ষে সত্য তুলিয়া ধরিতে কলামিস্ট তালাশ করো। গতমাসে একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে মহানগর আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার সহিত দেখা। তিনি কহিলেন, লেখালেখিতে কিছু হইবেনা আপনি যদি চায়ের দোকানে বসে কয়েকজনকে বোঝাতে পারেন সেটা অনেক কাজে দেবে। তাজ্জব বনিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম- আপনি কী লেখকদেরকে নিরুৎসাহিত করিতেছেন ? তিনি ছট করিয়া দন্ত খিলাইয়া কহিলেন- না না আমি মোটেও কাওকে নিরুৎসাহিত করিতেছিনা গ্রেফ বাস্তবতাটা কহিলাম। আমি তাজ্জব হইয়া নেতার তরফ চাহিয়া রহিলাম। অনেকেই কলমের শক্তির ব্যাপারে অজ্ঞ। আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এইদিনে জাতি অনেক বুদ্ধিজীবীকে হারাইয়াছে। যুদ্ধাপরাধীদের যখন ফাঁসিতে ঝোলানো হইতেছিল তখন পাশের বাড়ির কালার মা বুড়ি আসিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিল এই বুড়া মানুষদেরকে কেন ফাঁসি দিতেছে ? দোষ করিলেও বুড়া হইয়া গিয়াছে ফাঁসি দেওয়ার কী দরকার ছিল ? কালার মা বুড়িকে কহিলাম ওরা জওয়ান কালে অপরাধ করিয়াছিল। মরিবার পরে আবার কবর হইতে উঠাইয়া আল্লাহ সুবাহানা ওয়া তায়ালা সকলের বিচার করিবেন। তখন কী আল্লাহকে ছাওয়াল করিতে পারিবেন কেহ ? আল্লাহ আমরা তো মরিয়া গিয়াছি। সব শেষ। আবার কবর হইতে উঠাইয়া পিটাপিটি গরম পানির কুয়ায় ফেলা এত হাবিজাবি তকলিফ দেওয়ার কী সরকার ছিল ? কালার মা বুড়ি কী বুঝিয়াছিল জানিনা মিটি মিটি হাসিয়া আপনা মকানের দিকে রওয়ানা হইয়া গিয়াছিল। আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁহদের আত্মত্যাগেই অর্জিত এইদেশ। তাঁহাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি বন্ধ করিলেও তাহারা খোলস বদলাইয়া তাহাদের সমমনা দলে ভিড়িয়া গিয়াছে। সমমনারা তাহাদের পাইয়া সরকার ফেলিয়া দিবার হুংকার ছাড়িতে ছাড়িতে এখন হাঁপাইতেছে। আচ্ছা সরকার পতনের মতো কী এমন ঘটিয়াছে একটু বলিবেন কী ? মনে রাখিবেন আমি কোন পক্ষে নই। আমি দেশের পক্ষে। আজকে যাহাদেরকে দেখিতেছি তাহারা কেহই নতুন মুখ নহে। তাহাদের শাসনও আমরা দেখিয়াছি। দিনের পর দিন অন্ধকারে বসিয়া থাকিতাম। খাম্বা লিমিটেড নামে খাম্বা কোম্পানি খুলিয়া আন লিমিটেড মাল কামাইয়া তাহারা আজ ফের ক্ষমতার কুরছির খোয়াব দেখিতেছে। চেয়ারে বসিতে হইলে যেমন চেয়ার খেলায় অংশ নিতে হয় ঠিক তেমনি ক্ষমতায় আসিতে চাহিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে হইবে। বিদেশিরা কখনোই ক্ষমতায় বসাইতে পারিবেনা। তাহাদের চা খাওয়ানোটাও লোকসান।

লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক