ভালো ফলন দেখে লংগদুতে জুমচাষীদের মুখে হাসি

10

এম. কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম লংগদু উপজেলার পাহাড়ের ঢালু এলাকাগুলোর যে দিকে চোখ যায় সেদিকে এখন দেখা মিলে জুমের ফসল ও ছোট ছোট মাচাংঘর। আর এই মাচাংঘরকে স্থানীয় পাহাড়িদের ভাষায় বলে জুমঘর।
এসব মাচাংঘর থেকে গত ৫ মাসে পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে জুমের ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় পাহাড়ি জুমিয়া পবিরারের লোকজন। এবার লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে উঁচু পাহাড় ও টিলা মিলিয়ে কয়েকশ একর পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ হয়েছে।
লংগদু উপজেলায় পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জুমের ফসল উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জুমিয়ারা। ধানের পাশাপাশি জুম ফসল মারফা, শসা, চিনাল, বেগুন, সিমাই আলু, কাঁচামরিচ, তিল, সিম, আমিলা গোটা, বিভিন্ন জাতের কচু, বিভিন্ন জাতের আলু, সাবারাং-ফুজি (এক প্রকার সুগন্ধি যুক্ত পাতা), আমিলা পাতা (টক পাতা) লাউ, চাল কুমড়া, কলা, আদা, হলুদের ব্যাপক মিশ্র চাষাবাদ হয়েছে।
লংগদু উপজেলা সদর ইউনিয়নের দাদিপাড়ার বাসিন্দা রতœ মোহন চাকমা (৪০) বলেন, পাহাড়ে জুমের ফলন ভাল হয়েছে। দাদিপাড়া ছাড়াও আশপাশের প্রায় আট থেকে দশ গ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি। হাজাছড়া, শিলাছড়ি, কার্বারি পাড়া, ডানে লংগদুসহ পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকায় এবার জুমের ব্যাপক ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে বাজারে জুমের ফসল মারফা, চিনাল, বেগুন, ভুট্টা, আদা, আদা ফুল, হলুদের ফুল, সাবারাং, ফুজি, কচু, বিভিন্ন ধরনের সিম, ঢেঁড়শ, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া বাজারে আসতে শুরু করেছে।
ডানে লংগদু গ্রামের জুম চাষি জয় শংকর চাকমা (৪৫) বলেন, এবার পাহাড়ে জুমচাষ খুব ভালো হয়েছে। তাই জুমিয়াদের মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে আটারকছড়ার ভাঙ্গামুড়া, সুপারি পাতাছড়া, গুলশাখালীর গুরুসতাং, বগাচতরের হেলিপ্যাড, শিবের আগা, ভাসান্যাদমের খাগড়াছড়িসহ শিলকাটা ছড়া এলাকা থেকেও ব্যাপক হারে বাজারে জুমের ফসল আসতে শুরু করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নদীতে ভরা যৌবন থাকায় ইঞ্জিন চালিত বোট ও ছোট নৌকায় করে জুমের ফসল খুব সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে।
লংগদু কৃষি অফিস জানায়, এ বছর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ হয়েছে। যা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩৭৫ মেট্রিক টন।
জুম চাষিদের এবার কৃষি অফিস থেকে ব্রি-৪৮ জাতের ধান বীজসহ উফশি জাতীয় ফসলের বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জুম চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শসহ সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে অনেক আগে থেকেই সনাতন পদ্ধতিতে জুমচাষ করা হয়। তবে এখন অনেক চাষীই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সাথে যোগাযোগ করে আধুনিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাই আগের তুলনায় অনেক বেশি ফলন পাচ্ছে চাষীরা।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আবহাওয়া খুব বৈচিত্র্যময়। সারাদিন রোদ আর রাত হলেই বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি এমনটাই দেখছি। বৈচিত্র্যের কারণেই পাহাড়ের মাটিরও ভিন্ন রূপ। এই মাটিতে যা রোপণ করা হোক না কেন খুবই চমৎকার ফলন হয়। এবার লংগদুতে জুমের ভালো ফলন হয়েছে। তাতে চাষীরা খুশি হয়েছে।