ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রণয়নকে দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তবে এ নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ভারতে কোনও অনিশ্চয়তা তৈরি হলে তা প্রতিবেশী দেশগুলোকেও আক্রান্ত করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। রবিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের এমন উদ্বেগের কথা জানান।
গত ১১ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে ওই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভারতে। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। ভারতজুড়ে বিক্ষোভকেন্দ্রিক এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী। ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সেনা কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ। এরপরও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তবে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের বিদ্যমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দিল্লি এই সংকট উত্তরণ করতে পারবে। তিনি বলেন, সিএবি (নাগরিকত্ব সংশোধন আইন) ও এনআরসি (জাতীয় নাগরিক তালিকা) ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ভারত সরকার বার বার আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, এগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। আইনগত ও অন্যান্য কারণে তারা এগুলো করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতের এক নাম্বার বন্ধু। ঢাকা দিল্লিকে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা হলে বহু দেশ আক্রান্ত হয়। কারণ আমরা বিশ্বায়িত দুনিয়ায় বাস করি। আমাদের আশঙ্কা, ভারতে যদি সামান্য অনিশ্চয়তা তৈরি হয় তাহলে প্রতিবেশীরাও আক্রান্ত হতে পারে।’
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধন বিল প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে ক্ষুণ্ন করতে পারে। আইনটি পাস হওয়ার আগেই তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে সহনশীল রাষ্ট্র যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে; পথভ্রষ্ট হলে তাদের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে।
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন ও নিপীড়নের খবরও সম্প্রতি অস্বীকার করেছেন এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির খুব কম দেশেই আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনও সংখ্যালঘু নেই। আমরা সবাই সমান। তিনি (বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ) যদি কয়েক মাস বাংলাদেশে থাকেন তাহলে তিনি আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির দেখতে পাবেন।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতে আইন সংশোধন করে ভারত।