গত মাসে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে যেমন ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তেমনি টানা পাঁচদিনের ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলাসহ বান্দরবান, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়ও ব্যাপক বন্যা হয়। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় নগর ও জেলার অধিবাসীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি ইতোমধ্যে কিছুটা অতিক্রম করে স্বাভাবিক জীবন শুরু হলেও নগর ও উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ সড়কে সৃষ্ট বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দকে এখনও সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে গাড়ি চলাচল করছে। ঝাঁকুনি খেয়ে চলতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রতিবেদনে সড়কের বেহাল অবস্থা উঠে আসে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়কের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বর্ষা মৌসুমে মূল সড়কের পাশাপাশি শাখা সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় পুরোপুরি ডুবে গিয়েছিল মূল সড়কের মুরাদপুর, শুলকবহর ও বহদ্দারহাট অংশ। এছাড়া শাখা সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে নগরের কে বি আমান আলী সড়ক, জামালখান সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক, লয়েল রোড, কে সি দে সড়ক, খাজা সড়ক, চান মিয়া সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, হাটহাজারী (মুরাদপুর-অক্সিজেন) সড়ক, সার্সন সড়ক, ডিসি সড়ক, ওমর আলী মাতব্বর সড়ক, মাইজপাড়া সড়ক, পিলখানা সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, বিবিরহাট সুন্নিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মোহাম্মদপুর সড়ক, খতিবের হাট সড়ক। এর মধ্যে অনেকগুলো সড়ক আগে থেকে খারাপ ছিল।
পানি নেমে যাওয়ার পর চিরচেনা এসব সড়ক এখন গর্ত আর খানাখন্দকে ভরা। প্রতিবেদকের ভাষায় এসব সড়কে হাঁটলে যেমন উষ্টা খেয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি গাড়িযোগে চলাচলে ঝাঁকুনিতে কোমর যায় যায় অবস্থা নগরবাসীর। জলাবদ্ধতা শুরুর আগে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) মধ্যবর্তী ষোলশবহর অংশ উঁচু করার জন্য ইটের খোয়া আর বালি ফেলেছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু জলাবদ্ধতায় তা অনেকটাই ভেসে গেছে। এতে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এমনকি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে শত শত গর্ত। অপরদিকে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া ও কেরানিহাট-বন্দরবান এলাকার অধিকাংশ সড়কেরও একই দশা। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কেরানিহাট বাইতুল ইজ্জত থেকে শুরু করে বুড়ির দোকানের আগ পর্যন্ত বান্দরবান সড়কের মূল অংশ ভারি বৃষ্টিতে ভেঙ্গে বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে যাতে চরম ঝুঁকিতে গাড়ি চলাচল করছে। এ এলাকায় একদিক থেকে গাড়ি আসলে বিপরীত দিকের গাড়ি বন্ধ রাখতে হয়। এতে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়। উবয় প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাক্ষাতে জেনেছে বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর প্রায় একমাস অতিক্রম হলেও কোন সংস্থায় এসব সড়ক সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি। এতে সাধারণ মানুষ, গাড়ির চালক ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
চালক ও সাধারণ যাত্রীদের দাবি সড়ক ও জনপদ (সওজ) ও সিটি কর্পোরেশর দ্রæত সড়কগুলো মেরামতের উদ্যোগ না নিলে সাধারণ মানুষকে আরো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। তবে চসিক ও সউজ দুই সংস্থার দায়িত্বশীল কমৃকর্তারা বলছেন, মৌসমি বৃষ্টির পর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ভাঙ্গা সড়কগুলো মেরামত করা যাচ্ছেনা। বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে দ্রæত কাজ শুরু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও বরাদ্দ দুটিই করা আছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বর্ষা মৌসুমে সড়ক নষ্ট হওয়ার এই প্রবণতা নতুন নয়। প্রতিবছরই ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরের রাস্তাঘাট বেহাল হয়ে পড়ে। কোনো বছর বেশি, কোনো বছর কম। এ জন্য সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখা জরুরি। আমরা মনে করি, অজুহাত না দেখিয়ে বরং সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা এখন বেশি প্রয়েজন। ভাদ্র-আশ্বিনে মেঘঢাকা বৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যে। তাতে মেরামত কাজের বেশি বিঘœ ঘটে-এমনটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়না বলে আমাদের ধারণা। এখন বৃষ্টি নেই বললেই চলে। আমরা আশা করব চসিক ও সওজ জনদুর্ভোগ লাঘবে আরো দায়িত্বশীল হবে।