বিরোধী নেতাদের সাজা ‘নির্বাচনের মাঠ খালি করতে’

1

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কর্মসূচিতে নাশকতার মামলায় বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার সাজার রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার তিন মামলায় ৪০জনের বেশি নেতার সাজার রায় ঘোষণার দিন এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এসব ‘ফরমায়েসী রায়’ সুপরিকল্পিত।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে মাঠ ফাঁকা করার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শুধু ‘মিথ্যা মামলায়’ গ্রেপ্তারই নয়, পুরনো মামলায় সাজা দেওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে।
সজীব তরুণ এসব নেতাদের যদি সাজা দিয়ে আটকিয়ে রাখা যায়, তাহলে শেখ হাসিনার অবৈধ মসনদ টিকে থাকবে বহুদিন, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব নেতৃবৃন্দকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
যাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, এদের পরিবার অসহায় দাবি করে রিজভী বলেন, কে তাদের পরিবারকে দেখবে? একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের বছর ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগে করা মামলায় এদিন সাজা হয় ২৫ জনের। সবার দুই বছরের কারাদন্ড হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়ে গেছেন।
দÐিতদের মধ্যে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি আকরামুল হাসান মিন্টু, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি এনামুল হক এনাম।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগের বছর ২০১৩ সালের মে মাসে বিএনপির হরতাল চলাকালে রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকায় নাশকতার অন্য একটি মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ বিএনপির সাত নেতাকর্মীকে আড়াই বছর করে কারাদন্ড দিয়েছে অন্য একটি আদালত।
দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ ও হরতালে নাশকতার মামলায় সাজা হয়েছে আরও ১৪ জনের।
আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু। এই মামলায় সবার সাজা হয়েছে দেড় বছর।
‘বিরোধী নেতাদের ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না’ : বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকনকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়নি জানিয়েও এরও নিন্দা জানান রিজভী। তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদেরকে ডিভিশন হয় না। আমাদেরকে তো প্রায়ই এ সরকারের আমলে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি জানি, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ডিভিশন দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের কানেকশনের কারণে।
আর দেশের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ ও এমপিদের ইচ্ছাকৃত ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তাদেরকে অমানবিক পরিবেশে মেঝেতে থাকতে দেওয়া হয়েছে। এই শীতে মেঝের ঠান্ডায় তারা শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছেন। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্তে¡ও কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ডিভিশন দিচ্ছে না।
‘সুবিচার থেকে বঞ্চিত জামায়াত’ : জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্ট থেকে যে রায় এসেছিল, তা বহাল রেখে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে দলটি সুবিচার পায়নি বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ন্যায়ভ্রষ্ট’ রায় প্রদানের মাধ্যমে তাদের সুবিচার থেকে বঞ্চিত করার দৃষ্টান্ত নতুন নয় বলে দেশবাসী এই রায়ে বিস্মিত না হলেও সুবিচার লাভে শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগে যুক্ত ব্যক্তিগণের ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক’ বক্তব্য এবং ক্ষমতাসীন সরকারের ‘ইচ্ছা পূরণে সহায়তার’ ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়ছে।”
‘ভোটে আসা নির্বাচনী আত্মহত্যা’ : রিজভী বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে ‘সরকারের পথরেখা’ অনুসারে চলবে তার প্রমাণ তারা নিজেরাই দিচ্ছে। সরকারের ‘সাজানো প্রশাসনের’ কোনো রদবদল করবে না বলে তারা জানিয়েছে। তাদের জন্য এটাই স্বাভাবিক।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে, এই গ্যারান্টি নির্বাচন কমিশন কী করে দিতে পারে- সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের ‘রক্ত পরীক্ষা করে’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটি হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ‘একদলীয় বাকশালী নির্বাচন’। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের অর্থই হলো নির্বাচনী আত্মহত্যা।