তুষার দেব
আসন্ন রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি বাড়তি নজরদারির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যেই বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এছাড়া, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত অর্থ পরিবহন এবং সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। যদিও সিএমপিসহ বিভিন্ন ইউনিটে আইজিপির নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
নগর পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় এ বিষয়ে পূর্বদেশকে বলেন, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের স্বর্ণদ্বার। রমজান ও ঈদের মত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের সাথে মতবিনিময় করেছি। আইজিপি স্যারের সাথে বৈঠকে আমরা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলাম। তার দিকনির্দেশনার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে বিরাজমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা রমজান ও ঈদের সময়ের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। আশা করছি, আসন্ন রমজান ও ঈদে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে কোনও মহল যাতে ইস্যু তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সেদিকেই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তুলনামূলক বেশি সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ছাত্র ও শ্রমিক সংশ্লিষ্ট বিষয়, যে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা, নিত্যপণ্যের বেআইনি মজুতদারি ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোন মহল যাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। শিল্পাঞ্চল বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য শিল্প পুলিশকে অধিক তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে রমজানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেন কোনও ধরনের নাশকতার ঘটনা না ঘটে, সেদিক বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলেছেন আইজিপি। রমজানে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইফতার, তারাবি এবং সেহ্রির সময় বিশেষভাবে দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সিএমপি সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে গত ১৩ মার্চ বিভিন্ন সংস্থার সাথে ‘নিরাপত্তা সমম্বয় সভা’ করে নগর পুলিশ। দামপাড়া পুলিশ লাইনের মাল্টিপারপাস শেডে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে রমজান ও ঈদ উদযাপনে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। রমজানে নগরীর যানজট পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও ভোগপণ্যের সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক বিভাগকে প্রযোজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণও নিজ নিজ সেক্টরে বিদ্যমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সম্ভাব্য উপায়সমূহ উপস্থাপন করেন। এসব বিষয় সমন্বয় করে সিএমপি রমজান ও ঈদের সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। সবমিলিয়ে মাঠে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
আলাপকালে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল ফিতরে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে অপরাধ বিভাগে কয়েকশ’ অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে সিএমপির। এসময় মোবাইল কোর্টসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তার পাশাপাশি ঈদ-বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সে কারণেই থানা ও বিভিন্ন ইউনিটের নিয়মিত সদস্যের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে কয়েকশ’ ফোর্স মাঠে নামিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতে পারে। ৭০ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে মঞ্জুরীকৃত পাঁচ হাজার জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছে সাড়ে চার হাজার। চারটি পৃথক অপরাধ অঞ্চল ও ১৬টি থানা নিয়ে গঠিত সিএমপিতে সরাসরি আইন-শৃংখলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত পুলিশের সংখ্যা আনুমানিক আড়াই থেকে তিন হাজার। ছুটি ও প্রশিক্ষণসহ নানা কারণে গড়ে মোট জনবলের ২০ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে। এছাড়া নগরীর ৪৬টি কেপিআই (কী ইন্সটলেশন পয়েন্ট) -এর নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল ও প্রটেকশনের জন্য দুই শতাধিক পুলিশ সদস্যকে নিয়মিত ব্যস্ত থাকতে হয়। নিরাপত্তাজনিত টহল কার্যক্রমে ডিবি ও ১৬ থানা মিলিয়ে ৮২ টি মোবাইল টিম রয়েছে। এর বাইরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম, পুলিশ লাইন, বিশেষায়িত ইউনিট বম্ব ডিসপোজাল, সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম, পোশাক ভান্ডার, রেশন স্টোর, আদালতের নিরাপত্তা, আসামি আনা-নেয়া এবং সফররত মন্ত্রী ও বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ কারণে সংকটজনক বা বিশেষ প্রয়োজনে ধারে পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় সিএমপিকে। গত বছর এপিবিএন এবং শিল্প পুলিশ থেকে অতিরিক্ত নয় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে ধারে এনে রমজান ও ঈদের নিরাপত্তা সামাল দিতে হয়েছিল।