বাসগৃহে বৈদ্যুতিক খুঁটি, তারে জড়িয়ে নির্মাণকর্মীর মৃত্যু

8

রাউজান প্রতিনিধি

শান্তের জীবনটাই যেন ছিল অশান্ত। মা-বাবা থেকেও যেন নেই। ছোট বেলায় একটি ঘটনার রেশ ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় মা-বাবা। ফলে শান্ত বড় হয় চাচা-চাচির কাছেই। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে একদিন মানুষের মত মানুষ হবে। নিজের থাকা ভাঙা কুড়ে ঘর একদিন সুন্দর দালান হবে। কিন্তু তাও হলো না। দেওয়ানপুর এস কে সেন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা জীবন আর চালিয়ে যেতে পারেনি শান্ত। যার কারণে গ্রামের এক ব্যক্তির সহায়তায় কর্মে নেমে যায় সে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে তোলা ভবনে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হলো তার। গত ১২ অক্টোবর আহত হওয়া তরুণ শান্ত ৪ দিন পর গতকাল রবিবার মৃত্যুবরণ করেন।
জানা যায়, গত ১২ অক্টোবর (বুধবার) বেলা আড়াইটায় রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চুয়েট গেইটের দক্ষিণ পাশে বঙ্গবন্ধু হলের বিপরীতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন একটি দ্বিতল ভবনের ছাদে কাজ করছিল শান্ত। ছাদের মাত্র তিন ফুট উঁচুতে ছিল তেত্রিশ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইন। তাতেই শক খেয়ে পুড়ে যায় তরুণ শ্রমিক শান্তের দেহ। এরপর চমেক হাসপাতাল এবং বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় গতকাল রবিবার।
তার এই মৃত্যুর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এবং ভবন মালিক- উভয়কেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। ভবনটির মালিক রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী গ্রামের বাসিন্দা (বর্তমানে প্রবাসী) আবদুল হক। তার ভবনের ছাদে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শান্তের।
২০ বছর বয়সী শান্ত দত্ত রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ দেওয়ানপুর গ্রামের কাঞ্চন দত্ত ও বেবি দত্তের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিকে ভবনের ভিতরে রেখে এবং সড়কের জায়গা দখল করে রাঙ্গুনীয়ার এক প্রবাসীর ভবন নির্মাণের ফলে সেই খুঁটির বিদ্যুতে আহত হয় শান্ত। পরে গতকাল রবিবার তার মৃত্যু হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবি, সড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিটি অনেক পুরনো। আমাদের না জানিয়ে এই ধরণের ভবন নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনী।
শান্ত’র বাবা কাঞ্চন দত্ত বলেন, আমরা খুব অসহায়। আজ আমার ছেলেও মরে গেল।
প্রতিবেশি পুলক দত্ত বলেন, ছেলেটি ছোট থেকেই চাচির কাছে বড় হয়েছে। আজ দুর্ভাগ্য অকালে চলে গেল সে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুতের নোয়াপাড়া শাখার ডিজিএম অসিত শিকদার বলেন, আমি ঘটনাটি শুনে কষ্ট পেয়েছি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ভবন মালিক এই ধরণের কাজ করতে পারে না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
পাহাড়তলী ইউপির চেয়ারম্যান রোকন উদ্দিন বলেন, ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ পন্থায়। নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিবেন বলে আমাকে ভবন মালিক জানিয়েছেন।
রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থান গ্রহণ করা হবে।