বহু গুণে গুণান্বিত সৈয়দ আমিরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী (ক)

5

মুফতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোছাইনি

মানুষ বলতে রবের প্রতিনিধি। এ কারণে মানুষের জিবন পরিচালনা হতে হবে মূল কেন্দ্রীক। সূফি ফরিদ উদ্দিন আত্তার (র) বলেন ‘তাখাল্লাকু বি আখলাকিল্লাহ’ (তাজকেরাতুল আউলিয়া: ৪৭৩পৃষ্ঠা) আল্লাহর গুনে গুণান্বিত হওয়া এটাই মানব জিবনের স্বার্থকতা। আল্লাহর গুণের কোন শেষ নেই। অসিম গুণের মধ্যে একটি গুণ হলো প্রেম। মাওলানা রুমি বলেছেন ‘আল্লাহকে পাওয়ার জন্য অনেক পথ রয়েছে তন্মধ্যে আমি প্রেম টাকেই বেছে নিলাম’। এ প্রেমের জন্যই জগত সৃষ্টি। কোরান বলছে ‘ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়াঅ বুদুন’ ( ৫১:৫৬) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে জরীহ (র) বলেন ‘ইল্লা লিয়াঅ রিফুন’ অর্থ্যাৎ আল্লাহ মানুষ বানিয়েছেন তাকে চিনার জন্য। আর এ চিনার প্রথম সিঁড়ি হলো প্রেম। পৃথিবীর যে কজন দার্শনিক, সূফি, তরিকতের ইমাম ছিলেন সবাই প্রেমবাদি ছিলেন। এমনি একজন মহান প্রেমিক আওলাদে রাসুল(দ) হযরত মাওলানা শাহ সুফি হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী(ক)। যিনি কাদেরিয়া তরিকা থেকে এ স্বাধিন বাংলায় একটি স্বতন্ত্র তরিকা মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তন করেছেন। প্রেম বাদি এ তরিকার মূল শর্তই হলো প্রেম। বিখ্যাত নফডেয়ার বলেছেন ‘সবকিছুর শুরু,মধ্য এবং অন্তই হচ্ছে প্রেম’ মাওলানা বজলুল করিম মান্দাকিনী বলেন ‘প্রেমে মত্ত আল্লা নবী, প্রেমই কোরানের সার, প্রেমের প্রচার কল্পে, সৃজিয়াছেন এ সংসার,প্রেমের দিক্ষা নিয়ে এলেন , আম্বিয়া আউলিয়াগন’। গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী মহান ¯্রষ্টার প্রেম বিলিয়ে মানুষকে প্রেমিক বানিয়েছেন। এ রুহানি ফয়োজাতের বিতরণ কর্মসূচির অগ্রনায়ক ছিলেন গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর বাগানের শ্রেষ্ঠতম ফুল মুক্তাদায়ে আহলে কাবা গাউছুল আজম সৈয়দ গোলামুর রহমান (ক) প্রকাশ বাবা ভান্ডারী। যিনি তার ভ্রাতাগন ও হযরত কিবলার আশেক, খলিফাদের মাধ্যমে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ কে সাজিয়েছেন মনের মাধুরি দিয়ে। মানুষকে চোখের ইশারায় কামেল অলি আল্লাহ বানিয়ে স্ব স্ব স্থানে মসজিদ, মাদরাসা, খানেকাহ তৈরির মাধ্যমে সুন্দর একটি সাজানো বাগানে রূপান্তর করেছেন।
হযরত কিবলা ও বাবাজান কিবলার খলিফাগন দরবারে আসা যাওয়াকে কেন্দ্র করে একটি দিনে জমায়েত হওয়ার লক্ষে বহুদিন অপেক্ষা করেছিলেন। সবিশেষ বাব ভান্ডারী সহোদর ভ্রাতা আওলাদে রাসূল(দ) মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ আব্দুল ওহাব মাইজভান্ডারী (ক) ১লা মাঘ থেকে ৯ মাঘের বর্ণাঢ্য সাজানো ওরশ সংস্কৃতির এ সুবিশাল কর্মপদ্ধতির আঞ্জাম দিয়েছেন। পরবর্তিতে সবাই ১০ই মাঘের মহা প্রেমের বাজারে সদলবলে উপস্থিত হতেন। এ ভাবে নিজেকে হযরত বাবাজানের জন্য ফিদা করে দিয়েছেন তিনি। জিবনের শেষ সময়ে ঐশ্বরিক ইশারায় তার এ চলমান তরিকতের জিম্মাদার হিসেবে স্বীয় বড় শাহজাদা সৈয়দ আবুল কাছেম মাইজভান্ডারীকে দায়িত্ব দিলেন। সৈয়দ আবুল কাসেম মাইজভান্ডারীর নসলেই ১৯৫১ ইংরেজি ১৩৫৮ সালে শুভাগমন করেন অগণিত পথহারা মানুষের মহামান্য রাহবার হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী (ক)। যার মাতৃ ও পিতৃ বংশ দেখলে সহজে অনুমেয় হয় যে,তিনি সত্যি একজন সৌভাগ্যবান কারন তার পিতা ছিলেন একজন আওলাদে রাসুল (দ) এবং মাতা ছিলেন ফটিকছড়িস্থ জাহানপুর গ্রামের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল মাওলানা শাহ সুফি আবিদ শাহ(র) ও মুফতি গরিবুল্লাহ শাহ (র) এর বংশধর।
স্থানীয় আরবি পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহন করলেও পরবর্তিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ ও তরিকতের খেদমতের জন্য অর্থের প্রয়োজনে তিনি তৎকালিন বার্মা ইষ্টার্ণ লিমিটেড (বর্তমানে পদ্ম অয়েল কোম্পানি লিমিটেড) এর প্রধান কার্য্যালয়ে হিসাব শাখায় যোগদান করেন। কর্মজিবনে ছিলো তার অনেক যশখ্যাতি ও বিশ্বস্ততা। কর্মজিবনের অবসর সময়ে তিনি তরিকতের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। আশেক ভক্তদের কে নিয়ে রাত দিন আল্লাহর জিকিরে যুক্ত থাকতেন। জনশ্রুতি রয়েছে তিনি মানুষকে এত ভালোবাসা দিতেন যা বিরল। তার আচার আচরণ, আপ্যায়ন, কথা বার্তা সব মিলিয়ে তিনি মানুষের কাছে খুবই প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিগণিত হন। সম্মানিত পিতা যখন নিবিড়ভাবে দেখলেন কোন ধরনের লোভ লালসা বিহীন জিবন পরিচালনায় তিনি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তখন তিনি তাকে খেলাফত প্রদান করেন। গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী তরিকার ফয়োজাত এটা সামান্য বিষয় নয়। এ খেলাফত ও জিম্মাদারী পাওয়ার পর তিনি নিজেকে অসম্ভব সতর্কতার মধ্যে জোড়ে দিলেন। কারন তার মনে আছে যে সিদ্দিকে আকবর (র) বলেছিলেন, যে তোমরা আমাকে যতক্ষণ ন্যায়ের মধ্যে পাবে ততক্ষন আমাকে অনুসরণ করবে আর যদি আমি কিঞ্চিত পরিমান অন্যায়ে জড়াই তা হলে তোমরা আমার অনুসরণ করবে না” এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাকে অনেক বেশি ভাবিয়েছে। এ জন্য দেখা যায় তার জিবদ্দশায় তিনি সবার সাথে খোশমেজাজে কথা বলতেন সবার সাথে হাশিখুশি থাকতেন। তরিকতের খেদমতে তিনি ছিলেন বীর সিপাহসালার। একেবারেই অচিন গ্রামে যেখানে কেউই তাকে চিনেনা সেখানেও তিনি তরিকতের প্রচারে সফর করেছেন। ভয়ম্ক্তু ভাবে বাতিলের কাছেও তার ছুটে চলা ছিল অবিরাম। তাছাড়া ভয় কিসের মুমিন বান্দার সাথেতো আল্লাহ আছেন ‘ইন্নাল্লাহা মাআল্লাযিনা ত্ত¡াকাও ওয়াল্লাযিনা হুম মুহসিনুন ( ১৬: ১২৮) অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সৎকর্মশীল। এ সফরে তরিকার যে ফায়দা অর্জন হয়েছে তা ইতিহাস স্বীকৃত। লোকমুখে একটি বিষয় এখনো বর্ণনা আছে যে, তিনি যদি কোনো ভিন্ন মতালম্বী কারো সাথে কথা বলতেন এত বলতেন যে যাকে বলতেন সে বিরক্ত হয়ে গেলেও তিনি মোটেও বিরক্ত হতেন না। আর তার শাবলিল ভাষা প্রয়োগ সহ নানাবিধ বিষয় সত্যিই মনোমুগ্ধকর একটি অধ্যায়। ১৪০৯ বাংলা ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ রজব বুধবার এ মহান বুযুর্গ তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে জাগতিক জিবন থেকে রুখসত নেন।
৩রা আশ্বিন ১৮ সেপ্টেম্বর রোজ সোমবার এ মহান সাধকের ২১তম ওরশ মোবারক মাইজভান্ডার দরবার শরীফ গাউছিয়া ওহাব মঞ্জিলে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে। খতমে কুরআনুল করিম, কোরান হাদিসের আলোচনা, মিলাদ মাহফিল সহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এ ওরশ পাক অনুষ্ঠিত হবে। এ বরকতময় মাহফিলে সবার প্রতি সবান্ধব উপস্থিতির আহŸান জানিয়েছেন তদ্বীয় বড় শাহজাদা সৈয়দ রকিবুল ইসলাম মাইজভান্ডারী (ম) ও ছোট শাহজাদা সৈয়দ আতিকুল ইসলাম মাইজভান্ডারী (ম)। আসুন এ পবিত্র মাহফিলে আমরা উপস্থিত হয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের ফয়েজে এত্তেহাদী গ্রহনে আগ্রহী হই। আমিন

লেখক : খতিব, হাজি আব্দুর রশিদ চৌধুরি শাহি জামে মসজিদ, উত্তর বুড়িশ্চর, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম