ফুটবল জাদুকর মেসি

37

নূরনাহার নিপা


মেসি একটা কিংবদন্তির নাম। একটা ইতিহাসের নাম। যারা এটা মানতে নারাজ তাদের মতো মূর্খের জন্য ফুটবল নয়। এই ফুটবলারের পায়ের জাদুতে মেতে আছে গোটা বিশ্ব। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনা সাপোর্টররা। মেসি তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ছিলেন স্প্যানিশ বার্সেলোনার দলে টানা ২০২১ সাল ১৭ বছর খেলেছেন?
৭৯৪ ম্যাচ খেলে গোল করে ৬৯৪ গোল এবং আর্জেন্টিনার হয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পান এই সুপার স্টার। ২০০৫ সালে ১০৬ ম্যাচ খেলে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া এই আর্জেটাইনের বয়স এখন ৩৫ বলতে গেলে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু মাঠের পারফরমেন্স দেখলে বোঝার উপাই নেই মনে হবে তাঁর বয়স ২৩ না ৩৫ তিনি দুর্রন্ত দুর্বার। ১৭ /১৮ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড জন্ম দিয়েছেন এই জাদুকর ফুটবলার। মেসি একটা কাব্য নয় একজনই ইতিহাস। আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসাবে দায়ত্ব পালন করেছেন ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে বার্সেলোনা লিওনেল মেসি ক্লাবের প্রায়শই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে বিবেচিত এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের মধ্য একজন হিসাবে বিবেচিত।
লিওনেল মেসি টানা চারবার সহ মোট সাতবার ব্যালন ডি অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি তিনি সর্বোচ্চ ছয়বার ইউরোপীয় সোনালী জুতো জয়ের এ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবনের পুরোটাই কেটেছে বার্সোলায়। তিনি ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলে কৃতিত্বের মালিক। জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে ৭০০ অধিক গোল করেছেন। বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, সেরা খেলোয়াড়দের পুরস্কার অর্জন করেন, অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার স্বর্ণপদক জয় করেন, ২০০৫ সালের আগস্টে তাঁর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক হয়। ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ এ গোল করার মধ্য দিয়ে তিনি সেরা যুব খেলোয়াড় পুরস্কার অর্জন করেন, এরপর তিনি ইউরো চ্যাম্পিয়ান ইতালির বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ফাইনালিসিসা ট্রফি জেতান। বিশ্বকাপ সৌদি আরবের বিপক্ষে পরাজয় মেনে নিতে পারেন নাই তিনি। এরপর ভক্তদের হতাশ করেন নাই, নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শক্তিমান টিম পোল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে লড়াই করে অসাধারণ একটা ম্যাচ- টানটান উত্তেজনার ম্যাচ বিশ্ববাসীকে উপহার দিলেন। বিশ্ব ফুটবলের জাদুকর মেসির অসাধারণ গোল বিশ্ববাসী মনে রাখবে। ফুটবল খেলা আমাদের জীবনে আনন্দের খোরাক। বিশেষ করে সমাজে প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ সাহিত্য-সংস্কৃতি বিনোদনের আনন্দদায়ক খেলা ফুটবল। বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য রাতজাগে যে পরিমান আনন্দ অনুভব করে তা ফুটবলপ্রেমিরা জানে। তখনকার দিনে তেমন টেলিভিশন ছিল না। বাড়ির উঠানে অথবা মাঠে একটা টেলিভিশনে সবাই মজা করে খেলা দেখতো?
যখন গোল করে, তখন সাব্বাশ বলে, চেঁচেমেচি আকাশ ছুঁয়ে যায়। ছোট বেলায় রাতজেগে বাবার সাথে ফুটবল দেখতাম। তেমন না বুঝলে ও গোল করতো সেটা দেখে আনন্দিত হতাম। বাবা ছিল আর্জেন্টিনার সাপোর্টার আমি ও বাবার দলে। দারুণ খেলা উপভোগ করতাম তারপর থেকে দিয়াগো ম্যারাডোনার খেলা ভালো লাগতো তখন ফুটবল খেলা ম্যারাডোনার রাজত্ব। তাঁকে ভালোবাসতাম এমন কি আমার ইসকুল জীবনের প্রতিটি খাতা কিনতাম ম্যারাডোনার ছবি দেখে। আমি নিজেও ফুটবল খেলতাম সে এক ধরনের ভালোলাগা। তারপর এই জাদুকর মেসির খেলা দেখে চমকিত হয়। আমিও হয়ে গেলাম আর্জেনটিনার ভক্ত। তন্মধ্যে মেসি ফুটবল জাদুকর সবার কাছে জনপ্রিয়তা বিশ্বখ্যাত। মেসির গোলে দর্শক উত্তেজনা বাঙালিদের মধ্যে এতটা দাগ কাটো এ জয় নিয়ে।
বিশেষ করে জার্সির প্রেম চিরচেনা নানা রকম জার্সিতে বয়সের কোন ব্যবধান নেই। ভক্তদের হাতে ব্যানার ওড়ে, বাতাস ভারী হয় তাদের চেঁচামেচিতে, তাদের ফোটানো বাজি চারদিকে উচ্ছ¡াস। বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশি সমর্থকদের ভালোবাসা অন্যরকম, সমর্থকদের এই ভালোবাসা আর্জেন্টাইনদের নজর কেড়েছে। বাংলাদেশি ভক্তদের উন্মাদনা দেখে নিজে নিজেদের অফিসিয়াল টুইটার থেকো সমর্থকদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, ভালোবাসা দিলে ভালোবাসা পাওয়া যায় এটাও ভক্তদের বড়ো পাওয়া। তাছাড়া লিওনেল মেসি বাংলাদেশের পতাকা হাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে এবং পত্রিকায় পাতায় ও আমরা দেখেছি। ফুটবল বাঙালির প্রাণের কাছাকাছি হওয়ার বাংলা সাহিত্যে শিক্ষিত তরুণদের ফুটবল কী এক তীব্র উন্মাদনা সৃষ্টি করে, ফুটবল এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল কবিদের কবিতায় উঠে আসে চিত্র। এমন কি রবীন্দ্রনাথ প্রজাপতির নিবন্ধ উপন্যাসে অনেক খেলোয়াড় প্রশংসা করেন জসিম উদ্দিন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর শ্রীকান্ত উপন্যাসে ফুটবল খেলার এক বর্ণনায় বলেন। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের সে সময় ছিল চারটি নেশা আমপাড়া, নদীতে সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলা ও মাছ ধরা, পরে তিনি কখনো কখনো দাবা খেলায়ও মেতে উঠতেন। নজরুলের ফুটবল ও সাহিত্য প্রতিভার মতোই সে সময় সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছিল।
নজরুলের ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল কবির কাছে ফুটবল এত প্রিয় হয়ে ওঠে যে, ফুটবলকে তিনি স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে বলেন। শুধু খেলা দেখা দেখা নয়, খেলার অভিজ্ঞতাকেও কাব্যগ্রন্থে ফুটিয়ে তুলেন কবিরা পছন্দের খেলোয়াড়দের নিয়ে লেখায় মনের ভাব প্রকাশ করেন। ২০০৬,২০১০,২০১৪,২০১৮, মেসি বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০২২ মেসির শেষ বিশ্বকাপ খেলা, বিশ্বকাপ জয়ের পিছনে ছুটবে মেসি বাহিনীরা জয় হোক আর্জেন্টিনার। বাংলাদেশি ভক্তরা আর্জেন্টিনার দল ও মেসির কাছে জয়ের প্রত্যাশা।
লেখক : প্রাবন্ধিক