রূপম চক্রবর্ত্তী
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন বলে সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহনে কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পুরোপুরি চালু হলে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে বিপ্লব ঘটবে। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে গভীর অরণ্যসহ বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি চলে গেছে কক্সবাজারে। সারা বছর দেশী-বিদেশী পর্যটকে মুখর থাকে কক্সবাজার। চট্টগ্রাম আমাদের দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং এর মধ্য দিয়েই সঞ্চালিত হয় দেশের অর্থনৈতিক জীবনীশক্তি। দেশের সর্বমোট রপ্তানী বাণিজ্যের প্রায় ৭৫ভাগ সংঘটিত হয় চট্টগ্রামের উপর দিয়ে। অন্যদিকে আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ হার ৮০ ভাগ। রাজস্ব আয়েও চট্টগ্রামের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের মোট রাজস্ব আয়ের বিশাল অংশ আসে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে। এই রাজস্বখাতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের বড় ভ‚মিকা আছে।
শুভ উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন থেকে টানেলের ভেতরে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য একটা গর্বের বিষয়।’ টানেল চালু হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে নতুন শিল্পকারখানা। নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এটি। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চট্টগ্রামের বহুল প্রচারিত দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন যার কিছু অংশ হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। এ টানেলকে কেন্দ্র করে সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে তা অবশ্যই যথাযথ ও প্রশংসনীয়। কিন্তু সব পরিকল্পনা সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করতে হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কটি ৬ লাইনে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারমুখী এ সড়কটি এখনও চার লাইনে উন্নীত হয়নি।’ প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে যাতায়াত করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। বর্তমানে সড়কের কিছু কিছু অংশে পাশ বড় করলেও পুরো সড়কটি চার লাইন বা ছয় লাইনে উন্নীত করা হয়নি। এই সড়কের ব্যাপারে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ দেশনেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চেয়ে আছেন।
চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, যা ছিল চট্টগ্রামবাসীর জন্য স্বপ্নের মতো। এখন এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। কক্সবাজার সমুদ্র দর্শনে এসে প্রথম দর্শনেই সামুদ্রিক একটা আবহ পাওয়া যাবে গোটা স্টেশনে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এই রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল রান হবে। আর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে স্বপ্নের এ রেললাইনের উদ্বোধন হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই মেগা প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এই মেগাপ্রকল্পের দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার। দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থকেবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারে ট্রেন যোগাযোগ যোগাযোগ থাকলে দ্রæত সময়ে পর্যটকরা কক্সবাজার যেতে পারবেন।
ঝিনুকের আদলে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক স্টেশন: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের প্রায় ২৯ একর জায়গাজুড়ে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন দৃশ্যমান। ঝিনুকের আদলে নির্মিত হয়েছে এই স্টেশন। আইকনিক এই রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, নান্দনিক ডিজাইন আর নির্মাণশৈলীতে গড়ে উঠেছে স্টেশনটি। চারদিকে বসানো হয়েছে গøাস। ছাউনিটা পুরো কাঠামোকে ঢেকে রেখেছে। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না এই রেলস্টেশনে। ফলে সবসময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। স্টেশনটির ছাদ ঝিনুক আকৃতির। সামনে বসানো হয়েছে ফোয়ারা। সেখানে বসানো হচ্ছে মুক্তা। ৬টি লিফট ও ২টি চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কাজ শেষ করছেন শ্রমিকরা। আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা, বিশ্বমানের এ স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিনতলায় থাকবে তারকামানের হোটেল, যেখানে ৩৯টি রুমে থাকার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। স্টেশনের ভেতরেই থাকছে কেনাকাটার ব্যবস্থা। থাকছে হলরুম। আবার চাইলেই নির্দিষ্ট লকারে ব্যাগ রেখে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারবেন পুরো শহর।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের কথা প্রথমেই লিখতে হয়। একটা দেশের কাঙ্খিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দ্রæত প্রসারের জন্য সমুদ্র বন্দর পূবশর্ত যার মাধ্যমেই দেশের মূলতঃ সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটে। যে দেশের উন্নত যোগাযোগ নেই সেই দেশকে প্রচÐ বাধার সম্মুখীন হতে হয় আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যে। বেশিরভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য তারা পুরোপুরি অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকে। প্রকৃত পক্ষে, একটি দেশের সুষম ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সমুদ্র পথ, সড়ক পথ, রেলপথ, ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। এটা একটি দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ শক্তির মত কাজ করে। নেদারল্যান্ড, সিংগাপুর ইত্যাদি দেশগুলো সমুদ্র বন্দরকে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে।
গার্মেন্টস শিল্পের গোড়াপত্তন হয়েছিল চট্টগ্রামে। এক সময় চট্টগ্রামে গার্মেন্টসের সংখ্যা পৌঁছে ৭শ’তে। কিন্তু নানা সংকট ও সীমাবদ্ধতায় বর্তমানে তা নেমেছে প্রায় ৩শ’তে। নানা সীমাবদ্ধতায় রীতিমতো ধস নেমেছে বন্দর নগরীর গার্মেন্টস শিল্পে। গার্মেন্টস জগতের কিংবদন্তি নুরুল কাদের চট্টগ্রামের মানুষ না হয়েও ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রামেই দেশ গার্মেন্টসের প্রথম রপ্তানী মূলক পোশাক কারখানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি অনুভব করেছিলেন চট্টগ্রাম গার্মেন্টস শিল্পের জন্য উপযোগী। এই পোশাক শিল্পের সাথে চটগ্রামের অসংখ্য মানুষের জীবন জড়িত। বেশ কয়েক বছর আগে আনোয়ারায় গড়ে উঠা শিল্পজোন নিয়ে সবার মধ্যে আশা আর ভরসার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অনেক মানুষ কেপিজেডে গিয়ে কাজ করেন। প্রয়োজনে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরেকটি শিল্প জোন করা গেলে বেকার সমস্যার অনেক সমাধান হবে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের কৃষির ব্যাপারেও সামান্য কিছু লিখতে হয়। চন্দনাইশের পেয়ারা, নলুয়া, চরতীর বেগুন, পটিয়া শ্রীমাই খালের কচু এবং হাটহাজারীর মিষ্টি মরিচ খুবই সুপরিচিত হলেও চট্টগ্রামের কৃষির প্রধান শস্য ধান। তাছাড়াও বিভিন্ন মৌসুমে ব্যাপক শাকসবজির চাষ হয়। উল্লেখযোগ্য শাকসবজির মধ্যে রয়েছে- বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, সাদা কুমড়া, লাউ, ঢেড়শ, ঝিংগা, চিচিংগা, শশা, বরবটি, সীম, মটরশুঁটি, টমেটো, মুলা, বীট, গাজর, শালগম, ফুলকপি, বাধাকপি, পটল করলা, বিভিন্ন রকমের শাক ইত্যাদি। ফলমূলের ক্ষেত্রে নারিকেলই মুখ্য। তবে, আম, কলা ও কাঁঠালের উৎপাদনও হয়ে থাকে। রসনায় হরেক পদের খাবার পাওয়া যাবে চট্টগ্রামের গ্রামীণ থেকে শহুরে পরিবারগুলোতেও। মাছ, মাংসের পাশাপাশি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে শুটকি একটি জনপ্রিয় খাবার। এ জনপ্রিয়তা দিন দিন ছড়িয়েছে দেশের সবখানে। বঙ্গোসাগর অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুটকি করা হয় বেশি। কক্সবাজার, সোনাদিয়া, বাইশদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবনের রাঙাবালি, দুবলারচরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে শুটকি উৎপাদন হয়। শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি শুটকি তৈরি হয়। আগে এসব এলাকাগুলোতে চট্টগ্রামের বাজারে শুটকি গেলেও গত কয়েকবছর ধরে মহানগরীর অভ্যন্তরে বাকলিয়ার চর, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের চরপাথরঘাটা, চরলক্ষ্যা এলাকাতেও শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়। কৃষি প্রধান দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ আপনার প্রচেষ্টায় দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা আসবে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় লবণ চাষ লাভজনক। লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, গুণগত মান বৃদ্ধি, উৎপাদনকারীদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, লবণ চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং লবণের চাহিদা, সরবরাহ ও উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় মনিটরিং ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। কক্সবাজার সদর, রামু, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ এবং চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানা এলাকার লবণ চাষীদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে হবে। লবণের স্বাভাবিক চাহিদা মেটানো এবং আপদকালীন সময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করে দাম স্থিতিশীল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় অর্থনীতিতে লবণ শিল্পখাত প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার অবদান রাখছে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র সমগ্র কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলার বাশঁখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে লবণ উৎপাদন হয়। যা দিয়ে সারা দেশের লবণের চাহিদা পুরণ করা হচ্ছে। প্রান্তিক লবণ চাষীদের প্রেষণা প্রদানের জন্য একটা ঘোষণা প্রত্যাশা করছি।
১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে এই দেশের রাজাকার, আলবদর এবং দেশবিরোধী কিছু মানুষের সহায়তায় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি জানোয়ার বাহিনী। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশ অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের ভাবতে হবে যাদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের স্মৃতিচিহ্নগুলো ঠিকমত উন্নয়ন করছি কিনা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় বেশ কিছু বধ্যভূমি আছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ চট্টগ্রামে কয়টা স্থান বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সেই সংক্রান্ত তালিকার হালনাগাদ এবং বধ্যভূমিগুলোকে সংরক্ষণের জন্য আপনার নির্দেশনা প্রয়োজন। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি এদেশে প্রায় ৯৪২টি বধ্যভূমি শনাক্ত করেছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ১১৬টি স্থানকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে গিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা একটু স্মরণ করতে হচ্ছে।
পটিয়া উপজেলার ধলঘাট এবং গৈড়লা গ্রামের সাথে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এই ইতিহাসগুলো অনেকটাই হারিয়ে যাবে যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়। আমি অনুরোধ জানাব গৈরলা গ্রামে একটি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি যাদুঘর নির্মাণ করা হোক।
বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বেশ কিছু ফ্লাইওভার নির্মিত হওয়ার ফলে অনেক যাত্রীর দুর্ভোগ অনেক কমেছে এবং পণ্য পরিবহনে সহজ হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা সমস্যা চট্টগ্রামের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিশাল অংশ পানির নীচে চলে যায়। নদী ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক শহর হওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতা হয়। এ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কাজ চলছে। চট্টগ্রাম শহরকে যদি সম্পূর্ণ জলবদ্ধতা মুক্ত করা যায় তাহলে দেশের বিনিয়োগ আরও অনেক বাড়বে। চট্টগ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় অর্থনীতিকে দেহ হিসেবে কল্পনা করলে চট্টগ্রাম তার হৃৎপিন্ড। এখান থেকেই অর্থনীতির শিরা-উপশিরায় রক্ত, প্রাণপ্রবাহ বা জীবনীশক্তি সঞ্চারিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি সব সময় সচেতন থাকতে হবে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন হলে উত্তর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম সহ সকল মামুষের উপকার হবে। বীর চট্টগ্রামের মাটি প্রধানমন্ত্রীর শুভাগমনে ধন্য হয়ে উঠুক।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট