প্রথমে টার্গেট, তারপর অজ্ঞান করে তারা

19

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে আবু ছৈয়দ নিহতের ঘটনায় ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গত রবিবার দুপুরে নগরীর পাহারতলী ও হালিশহর থানা এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করে বলেন, প্রথমে আবু ছৈয়দকে হালুয়া জাতীয় চেতনা নাশক পদার্থের সাথে মধু মিশ্রণ করে খাওয়ানো হয়। কিছুক্ষণ পর ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যাই। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার ১৬ নং কাদিরপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামের ইব্রাহীমের পুত্র মহিন উদ্দিন (৩০)। নগরীর হালিশহর টেন্ডলের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন তিনি। একই এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র মো. আনোয়ার হোসেন (৪২) ও ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ৬নং ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র মো. রফিকুল ইসলাম (৪২)। তারা নগরীর পাহাড়তলী গ্রীনভিউ আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন।
জানা যায়, কক্সবাজারের বাসিন্দা আবু ছৈয়দ দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুন্ড থানার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের জলিল গেট এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তিনি গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইলিশ মাছ কিনতে চট্টগ্রাম শহরে ফিশারি ঘাটে যান। সেখানে মাছ না পেয়ে তিনি ফের সীতাকুন্ডের বাসার উদ্দেশে চট্টগ্রামের অলংকার মোড়ে আসেন এবং তার স্ত্রীকে কল করে বাসায় আসার কথা জানান। অলংকারে বাসে উঠার আগ মুহুর্তে সেখানে দুই ব্যক্তির সাথে আলাপ হয় এবং তাদেরকে সীতাকুন্ড যাবেন বলে জানান। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিদের সাথে বাসে উঠেন আবু সৈয়দ। এরপর সুযোগ বুঝে তারা আবু সৈয়দকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে নগদ ২০ হাজার টাকা, মোবাইলসহ তার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে রাত ১০টার পর তার ফুফাতো ভাই মো. জসিম কল করে জানান, সীতাকুন্ড থানার বড়দারোগার হাট বাজারে বাসের মধ্যে আবু সৈয়দ অজ্ঞান অবস্থা পড়ে আছেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা প্রথমে সীতাকুন্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জীবন-মৃত্যুর সাখে পাঞ্জা লড়ে ১০দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। পরে আবু ছৈয়দের পুত্র বাদী হয়ে ৭ অক্টোবর সীতাকুন্ড থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা পরবর্তী পুলিশ কোন কুলকিনারা করতে না পারায় মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করতে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। হত্যার মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে তিনি আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার ছায়া তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবু ছৈয়দ হত্যার মামলার ৩ আসামিকে রবিবার দুপুরে পাহারতলী ও হালিশহর থানা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে আটক করি। সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সীতাকুন্ডে র ভাটিয়ারী এলাকায় নিয়ের যাই। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা অপরাধ স্বীকার করেন।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা এ পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে ৪০টির বেশি এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বাসে উঠে একজনকে টার্গেট করে, তারপর খাওয়ায় চেতনানাশক বড়ি। এতে অনেকে মৃত্যুবরণ করলেও পরিবার এখনো জানে না তারা কোথায়। অনেকের মৃত্যুর পর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম দাফন কাজ শেষ করেছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান পিপিএম বলেন, আবু ছৈয়দের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪ আসামির মধ্যে ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়াও পটিয়া, কর্ণফুলীসহ চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাঠগড় রোডে এসব অপরাধমূলক কাজ করে।