পোশাক খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা জরুরি

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের বাজেটে তৈরি পোশাক খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা অতীব জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এই মত দেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। আর রপ্তানির প্রধানতম খাত হলো তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের প্রায় ৮২ শতাংশ রপ্তানি আয় আমরা তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে অর্জন করে আসছি। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। সৈয়দ নজরুল বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানির টার্গেট সামনে রেখে এ শিল্পে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। কিন্তু কভিড-১৯ এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে পোশাকের দর পতন, অর্ডার স্বল্পতা, মূল্য কম, সমস্ত শিল্পেই পেমেন্ট ইনসিকিউরড সহ রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। অন্যদিকে সূতা ও ডাইস কেমিক্যালের দাম বৃদ্ধি, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের দেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন।
এ অবস্থায় রপ্তানি বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকার কর্তৃক নীতিগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ কমানোর লক্ষ্যে বাজেটে বিদ্যুৎ গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সহ মূল্য হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে, ভ্যাট ট্যাক্স কমাতে হবে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখতে হবে এবং রপ্তানি আয়ে ইনসেন্টিভ অব্যাহত রাখতে হবে। বাজেটে ‘ইজি অব ডুইং বিজনেস’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহজীকরণ নীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এ মুহূর্তে সরকারের কাছ থেকে যে নীতি সহায়তাগুলো আশা করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিবৃতিতে তুলে ধরনের ব্যবসায়ী এই নেতা। সেগুলো হলো- রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ১.০০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে পূর্বের ন্যায় ০.৫০ শতাংশ করা এবং আগামী ৫ বছর পর্যন্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের Assessment এর সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয়, যেমন- Gain on Assets Disposal, Sub-contract Income এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে ৩০ শতাংশ কর আরোপ না করে কর্পোরেট কর ১২ শতাংশ হারে আরোপ করা এবং আগামী ৫ বছর পর্যন্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের রুল-১৬ এর টেবিল-১ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির মূল্য পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা, উক্ত করকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা, অন্যথায় Assessment এর সময় কর আরোপকালে কর্পোরেট ট্যাক্স ১২ শতাংশ হারে কর ধার্য করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের ERQ (Exporter Retention Quata Fund থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ হতে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করতে হবে। একইভাবে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার। যেহেতু নগদ সহায়তা কোনো ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসংগত।
এছাড়া বর্তমানে সারা বিশ্বেই জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে শিল্পের প্রসার এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সোলার পিভি সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জ্বালানি সংকট নিরসন, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং রপ্তানির ধারা চলমান রাখার জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সরঞ্জামাদি শুল্ক রেয়াতিহারে আমদানির সুযোগ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।