পটিয়ায় পিচ্ছিল সড়কে দুর্ঘটনা : যুবকের মৃত্যু

6

পটিয়া প্রতিনিধি

লবণাক্ত পিচ্ছিল মহাসড়কে মোটরসাইকেল উল্টে গিয়ে ২ আরোহী ঢুকে গেলেন তেলবাহী ভাউচারের নিচে। বিপরীত দিক থেকে আসা সেই ভাউচারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলেন যুবক রতন (২৬)। এসময় তার সাথে থাকা মো. হাসান (২৮) নামের আরেক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে এখন হাসপাতালে। তার অবস্থাও সংকটাপন্ন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া অংশে লবণ বোঝাই ট্রাক থেকে লবণ পানি পড়ে সড়কটির ব্যাপক অংশ পিচ্ছিল হয়ে থাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সেই পিচ্ছিল সড়কে ব্রেক কষায় মোটরসাইকেল উল্টে গিয়ে ভাউচারের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়।
গতকাল রবিবার বিকালে উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রতন মিরসরাই উপজেলার মনোরঞ্জনের ছেলে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আহত হাসানের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীতে। তারা দুইজনই বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
এদিকে নিহত রতনকে মুসলিম দাবি করায় তার মরদেহ দাফন না কী সৎকার হবে- তা নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন দুই পক্ষ। নিহত যুবককে তার পরিবার হিন্দু দাবি করলেও তার বন্ধু ও পরিচিতজনেরা তাকে মুসলিম বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, নিহত রতন হিন্দু পরিবারে জন্ম নিলেও গত কয়েক বছর আগে আইনীভাবেই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে রতন থেকে আহমদ নামে নিজেকে পরিচিত করেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে দুই পক্ষ তাকে ধর্মীয় রীতি মোতাবেক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে চান। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
ফলে লাশটির দাফন না কী সৎকার হবে- সে বিষয়ে আজ সোমবার আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান হাইওয়ে থানার ওসি স্নেহাংসু বিকাশ।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহনের কারণে গাড়ি থেকে নির্গত লবণাক্ত পানিতে পিচ্ছিল সড়কে পরিণত হয়ে মানুষের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে। পিচ্ছিল সড়কের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে এ সড়কে। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশকে খোলা লবণবাহী গাড়ির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গতকাল রবিবার দুপুরে সেই পিচ্ছিলতার কারণে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানান।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, কক্সবাজারমুখি তেলবাহী ভাউচার মনসা বাদামতল এলাকায় পৌঁছালে চট্টগ্রাম নগরমুখী মোটরসাইকেলটির চালক পিচ্ছিল সড়কে সামনে গাড়ি দেখে ব্রেক কষেন। ওই সময় মোটরসাইকেলটি রাস্তায় উল্টে পড়ে গেলে দুই আরোহী গড়িয়ে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা তেলবাহী ভাউচারের নিচে ঢুকে যান। ফলে ঘটনার আকষ্মিকতায় ভাউচারের চাকায় পিষ্ট হয়ে রতন নিহত হয় এবং গুরুতর আহত হন অপর আরোহী মো. হাসান। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনিসুল ইসলাম জানিয়েছেন, তেলবাহী ভাউচারের চাকায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ও অপর একজন গুরুতর আহত হন। তেলবাহী ভাউচারটি আটক ও দুর্ঘটনার শিকার মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে যুবকের লাশ নিতে এসে নিহতের মাসী (খালা), মাসীত বোন বিপা দাস ও মাসীত ভাই অসিম দাস বলেন, নিহত রতন দাস হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তিনি হিন্দু ধর্মের সকল আচার-নীতি পালন করেছেন। তার শেষ অন্তিমক্রিয়া আমরা আমাদের মত করে করব। সে সাবলম্বী না হওয়ায় বিয়ে করেনি। মায়ের সাথে নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। একটি মোবাইল কোম্পানিতে কাজ করতো। কাজের সূত্রে পটিয়া থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
অন্যদিকে নিহত যুবকের নাম আহমেদ দাবি করে তার বন্ধু আব্দুল করিম, রুবেল দাশ গুপ্ত, শাহিন, মো. বাদশাসহ সহকর্মী-সহপাঠীরা দাবি করছেন, নিহত আহমেদ একজন ঈমানদার মুসলমান। প্রায় তিন বছর আগে তিনি হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে আইনী প্রক্রিয়ায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এর আগে ও পরে তিনি ইসলামী রীতিনীতি অনুসরণ করতেন। তবে তিনি তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় মাকে ছেড়ে কখনও যায়নি। তিনি মাকে অনেক ভালোবাসতেন। মায়ের সাথে থাকতেন। তার মা তার মুসলিম হওয়ার বিষয়টি জানতেন।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের অফিসার ইনচার্জ স্নেহাংশু বিকাশ জানান, যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যুবক মুসলিম না হিন্দু তা এখন আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।