নির্বাচন হোক উৎসবমুখর

8

গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেশের রাজনীতিতে প্রতিদিন নানা মেরুকরণ ঘটছে। আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের শেষ হচ্ছে না। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের মিত্রদের নিয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের গতি হারিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, তাদের জোটভুক্ত চৌদ্দদলসহ মহাজোটের শরিক জাতীয়পার্টি নির্বাচনী আমেজে মেতে উঠেছে। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপি এখন রিষ্টপিষ্ঠ। বিএনপির প্রবীন কয়েকজন নেতাসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতারে নিয়ে দলটি সুসংগঠিত হচ্ছে। তারাও কয়েকটি ইসলামি দলকে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে বলে খবর পাওযা গেছে। সব মিলিয়ে জোটে আটঘাট বেঁধে ভোটে নামছে অনেক দল। এরপরও বলা যায়, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন যতটুকু আনন্দময় ও উৎসবমুখর হবে, কোন বড় দল নির্বাচন বর্জন করলে তা আর বেশি থাকবে না। এরপরও শোনা যাচ্ছে সর্বশেষ বিএনপি নির্বাচন মুখী হবে! কিন্তু সম্প্রতি আন্দোলনগুলো দেখলে ভাবনায় উল্টোটা আসে। ফলে যতই দিন ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনা যেন ততই বাড়ছে।এরমধ্যে আমরা লক্ষ করছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয়ান দেশ সমূহ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার শেষ নেই। যদি বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন হয় তাহলে পরবর্তীতে কি হবে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয় ইউনিয়ন কি করবে পরবর্তীতে ? অনেক প্রশ্নের মাঝেই নির্বাচন কমিশন এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের দিকে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা একটি উৎসব কিন্তু এক পক্ষকে আরেক পক্ষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। রাজনীতির প্রধান বিষয়ই হলো মানুষের পাশে থাকা। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে বসা। জনগণের মন জয় করে ভোট আদায় করা কিন্তু কোথায় যেন এই তালটা হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। চলছে একপক্ষের কথার বানে অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার প্রক্রিয়া। কথার প্রক্রিয়াটা ঠিক ছিল কিন্তু চলে এসেছে হামলা মামলা। চলছে দেশের ক্ষতি করার নগ্ন কার্যক্রম। কোনো দল আবার নিজের কর্তৃত্বের উপর বিশ্বাস হারিয়ে অন্য দেশের কাছে নিজেদের হতাশার কথা ব্যক্ত করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে দেশের প্রতি ভালোবাসার জায়গাটা ক্ষমতার লোভের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। দেশে যখনই নির্বাচনের সময় আসে তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে তৈরি হয় বৈরিতা। তৈরি করা হয় ক্ষমতায় যাওয়ার বিভিন্ন কৌশল। আর এইসব কৌশল নিয়ে মাঠে ঝড় তোলা। ইত্যেমধ্যে দেশের প্রধান দুই দলই রয়েছে দুই মেরুতে। সাধারণ মানুষের আশার বিষয়গুলোর সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ব্যাপক ফারাক। সুশীল সমাজও এখন বিভক্ত বলেই মনে হয়। এখন তৈরি হয়েছে দলীয় সুশীল সমাজ। দুদলেরই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলছে রাজপথ দখলের। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। দায়িত্বশীলদের মুখের কথা এক। সবাই অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চায়। এ নির্বাচন হতে হবে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। বিদেশি বন্ধু দেশগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে নানা তৎপরতা চালিয়ে আসলেও বাস্তবে তাদের উদ্দ্যেশ্য স্পষ্ট নয়। আসলে তারা কী চায়-তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারি দল ও আন্দোলনকারী বিরোধী দল কেউ আর তাদের উপর আস্থা রাখতে পারছেনা। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশীদের এত হস্তক্ষেপ চলে কিনা আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের উপর আস্থার অভাবে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় তাকে, যা একধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলা যায়। এখন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বেও উচিৎ এ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আসা। একে অপরের প্রতি আস্থা বাড়িয়ে সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খোঁজা উচিত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর হোক এমন প্রত্যাশা দেশবাসী।