আর এক বা দুদিন পরই মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতর। পবিত্র শবে কদরের পরেই মূলত ঈদের আমেজ শুরু হয়ে যায়। এবার ঈদকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ নয় দিন প্রায় সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। ফলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ নগর ছেড়ে ফাঁড়ি জমাচ্ছে গ্রামে। অনেকে আবার এ সুযোগে পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বাস ট্রেন ও লঞ্চে মানুষের ভিড় ও সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। সাধারণত প্রতিবছর ঈদে ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। গত দুইবছর কোভিডের কারণে মানুষ গ্রামে বা কোথাও ভ্রমণে সতর্ক ছিল। এবার কিন্তু তা নেই। এরউপর লম্বা বন্ধে মানুষ ছুটছেই আপনালয়ে। গত দুদিন সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ লক্ষ্য করা গেছে। গরমে এমনিতেই মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থায় সড়ক-মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। কাজেই সড়কে যাতে যানজটের কারণে মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষ করা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো গাড়ি বিকল হয়ে গেলে অথবা মহাসড়কের পাশে হাটবাজার বসার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। কাজেই ফিটনেসবিহীন বা ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি যাতে মহাসড়কে নামতে না পারে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে। যাত্রী, পরিবহণ কর্মী, গাড়ির মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক না থাকলে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হবে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া মনোভাব। অনেক সময় যাত্রীরাও গন্তব্য পৌঁছার তাড়া থেকে চালককে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, যা মোটেই উচিৎ নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা মনে করি, চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে যাত্রীদের বরং উচিৎ হবে তাকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো। অনেকসময় আবার গাড়ির মালিকের চাপের কারণেও চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। আবার কোনো কোনো চালক অভ্যাসবশত বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেন। যে কারণেই হোক না কেন, মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের এ সময়ে চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা থেকে বিরত থাকতে হবে। মালিকদেরও দায়িত্ব হবে অতিরিক্ত ভাড়া পাওয়ার আশায় চালককে কোনরকম চাপ না দেয়া। এছাড়া একটানা ৫ ঘণ্টা এবং দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাতে বাধ্য করাও নীতি ও নৈতিকতা বিরোধী। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে।
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট রয়েছে। চট্টগ্রামে স›দ্বীপে নৌ রুট ছাড়া বিকল্প কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। কুমিরা বা সদরঘাট থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে এ এলাকার মানুষ সন্দ্বীপে যান। কিন্তু এ নৌরুটের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। ঈদ বা বিভিন্ন উৎসবের সময় লক্করঝক্কর ঝুঁকিপূর্ণ স্পিটবোট, ট্রলার বা শীপ নামিয়ে যাত্রী পারাপার করে থাকে। কিছুদিন আগে সন্দ্বীপবাসী এর বিরুদ্ধে গায়ের কাপড় খোলে মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন। যা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ অব্যবস্থাপনার দ্রæত অবসান করতে হবে। এ রুটে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ কমাতে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু সড়কপথে নয়, নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথ-সব ক্ষেত্রেই ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে পারে। সবার ঈদযাত্রা আনন্দময় হোক।