ওয়াসিম আহমেদ
পোর্ট কানেক্টিং রোড বা এক্সেস রোডের ভোগান্তির গল্প শেষ হয়েছে। আরাকান সড়কের কাজও শেষ। সব মিলিয়ে নগরজুড়ে মূল সড়কের অবস্থা ভালো বলা চলে। গেল বর্ষায় মূল সড়কের চেয়ে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। বিটুমিনের আস্তরণ উঠে গিয়ে অল্প বৃষ্টিতে কাদাযুক্ত হয়ে উঠছে সড়ক। ফলে বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে মূল সড়কে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। মশক নিধন, জলাবদ্ধতায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে এবার সড়ক মেরামত কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হয়নি। এ ছাড়া নিজস্ব টাকা দিয়ে সড়ক মেরামত থেকে সরকারি বরাদ্দের প্রকল্প ভিত্তিক উন্নয়ন কৌশলের কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কে ‘ভোগান্তির গর্ত’ দিন দিন বড় হচ্ছে। তবে চলতি বছর অনুমোদন পাওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাজ শুরু হলে সড়কের চেহারা বদলাবে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
নগরীর ৪নং ওয়ার্ড চাদগাঁও এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চুনারটাল এলাকার সড়কটির বেহাল দশা। বিটুমিনের প্রলেপ উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সে গর্তে পানি জমে কাদাযুক্ত হয়ে পড়েছে সড়ক। একই ওয়ার্ডের শমসের পাড়া সড়ক, চাঁনমিয়া সড়ক, বানিয়ারপুল সড়কেরও একই অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সিডিএ খালের কাজ করছে। দীর্ঘদিনেও সে কাজ শেষ হয় না। খালের পাশের সড়কটি নষ্ট হয়ে আছে বছরজুড়ে। বৃষ্টি হলে পানি জমে। বর্ষা শেষে সড়কের বেহাল দশা। এমন ভোগান্তি দূর করতে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ’র দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছেন বাসিন্দারা। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরাল পূর্বদেশকে জানান, চুনারটাক সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। বিষয়টি নিয়ে আমি মেয়রের সাথে কথা বলেছি। প্রকল্পের অধীনে সড়কটির উন্নয়নে অতিসত্তর টেন্ডার আহবানের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। এ ছাড়া সমশের পাড়া, চাঁনমিয়া রোড এবং বানিয়ারপুল সড়কের সাথে লাগোয়া খালে কাজ করছে সিডিএ। ভালো সড়ক নষ্ট হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ চললেও শেষ হচ্ছে না। তাই ওসব সড়কে ভোগান্তি বেশি হচ্ছে বলে জানান এসরাল। এ ছাড়া আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অধীনে তার ওয়ার্ডে ৮০ কোটি টাকার কাজ হবে বলেও জানান।
নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সড়কই ভাঙা। নির্মাণধানী ভবনের মালামাল বোঝাই ভারী গাড়ি চলাচলের ফলে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশেও সড়কে কাদা জমে আছে। গর্তে ভরা সড়কগুলোতে পানি জমে থাকায় পথচারীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গেল বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চকবাজার, পূর্ব বাকলিয়া ও পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের সড়ক। এসব ওয়ার্ডে আবাসিক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বিটুমিনের প্রলেপ উঠে গিয়েছে। সিডিএ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ড্রেন তৈরি করেছে। সড়ক ভাঙাচোরা অবস্থায় ফেলে রেখেছে। বাকলিয়া এলাকার ছৈয়দশাহ রোডের বাসিন্দা গৃহিনী সেলিনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে পানি উঠে ছৈয়দশাহ রোডে। এক্সেস রোড থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত সড়কটিতে কাজ শুরু হয়ে আবার বন্ধ রয়েছে। বিটুমিন উঠে গেছে, এখন ইটের খোয়ার আস্তরণও উঠে যাচ্ছে। সড়কের যা অবস্থা হাঁটার সময় মানুষ হোঁচট খাচ্ছে।’ একইভাবে ছৈয়দশাহ রোডের রসুলবাগ আবাসিক, খাল পাড় এলাকা, ল্যান্ডমার্ক হাউজিং ও এহেসান সিটি আবাসিকের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। নগরীর উত্তর কাট্টলি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সুভাস দাশ পূর্বদেশকে জানান, গত বর্ষায় প্রায় সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতে তেমন তৎপরতা দেখতে পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে ঈশান মহাজন রোড, দরগাহ বিশ্বাস রোড, সেক্রেটারি রোডের অবস্থা বেশি খারাপ বলে জানান এ বাসিন্দা। এ নিয়ে ১০নং উত্তর কাট্টলি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ড. নেছার উদ্দীন মঞ্জু পূর্বদেশকে বলেন, ‘বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট সড়কগুলো মেরামত করা হয়েছে। ঈশান মহাজন রোডের রেলগেট থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কটি বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বড় সড়ক হওয়ায় ছোট বরাদ্দ দিয়ে মেরামত কাজ হবে না। তাই ইতোমধ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী বর্ষার আগেই সড়কটির মেরামত শেষ হবে।
এসব বিষয় নিয়ে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘মূল সড়কে প্যাচওয়ার্ক শেষ করেছি। ভেতরের সড়কগুলো বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুইবার খরচ না করে নভেম্বর থেকে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এতে নগরীর সবগুলো সড়ক অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই সামনের শুষ্ক মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে আগামী বর্ষার আগে অভ্যান্তরীণ সড়কগুলোতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।’