নগরজুড়ে পথচলায় খানাখন্দের ঝাঁকুনি

33

ওয়াসিম আহমেদ

ভারী বৃষ্টি, জলাবদ্ধতার পর মাস পেরুলেও সংস্কার হয়নি সড়কের ক্ষত। নগরজুড়ে সড়কে গর্ত আর খানাখন্দের ঝাঁকুনি খেয়ে চলতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। গাড়ি চলাচলে তৈরি হয়েছে ঝুঁকি। মাসজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগের পারদ চরমে উঠেছে।
তবে, সিটি করপোরেশন বলছে, পুরোপুরি বৃষ্টি না থামায় দৃশ্যমানভাবে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না। নগরীর সড়ক নেটওয়ার্ক দুর্ভোগমুক্ত করতে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করেছে সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগ। এমনটা দাবি করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
এ বর্ষা মৌসুমে মূল সড়কের পাশাপাশি শাখা সড়কগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাঁটলে যেমন উষ্টা খেয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে, তেমনি গাড়িযোগে চলাচলে ঝাঁকুনিতে কোমর যায় যায় অবস্থা নগরবাসীর। বর্ষা মৌসুমে নগরের সড়ক নষ্ট হওয়ার এই প্রবণতা নতুন নয়। প্রতিবছরই ভারী বর্ষণ ও জোয়ারে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরের রাস্তাঘাট বেহাল হয়ে পড়ে। কোনো বছর বেশি, কোনো বছর কম। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ার তালিকা করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। রাস্তাঘাট থেকে পানি নামার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের একটি তালিকা করে। এই তালিকা অনুযায়ী, এবারের জলাবদ্ধতায় নষ্ট হওয়া সড়কের পরিমাণ ৫০ কিলোমিটার। এ ছাড়া দুই কিলোমিটার নালা-নর্দমা ও দুই কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারে ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে জানান সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা।
এবারের জলাবদ্ধতায় ডুবেছিল মূল সড়কের মুরাদপুর, শুলকবহর ও বহদ্দারহাট অংশ। পানি নেমে যাওয়ার পর এসব অংশে সড়কের ক্ষত বেরিয়ে এসেছে। জলাবদ্ধতা শুরুর আগে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) মধ্যবর্তী ষোলশবহর অংশ উঁচু করার জন্য ইটের খোয়া আর বালি ফেলেছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু জলাবদ্ধতায় তা অনেকটাই ভেসে গেছে। এতে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এমনকি বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে পিচ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে শত শত গর্ত। নামার অংশেও ভেঙেছে সড়ক। শুধু এসব সড়ক নয়, নগরীর বেশিরভাগ সড়কের পিচঢালাই (কার্পেটিং) নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় সড়কে দুই থেকে ছয় ইঞ্চি গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ছোট-বড় হাজার হাজার পাথর। এগুলো পথ চলাচলে ঝুঁকি ও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।
এবারের বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উল্লেখযোগ্য সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগরের কে বি আমান আলী সড়ক, জামালখান সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক, লয়েল রোড, কে সি দে সড়ক, খাজা সড়ক, চান মিয়া সড়ক, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, হাটহাজারী (মুরাদপুর-অক্সিজেন) সড়ক, সার্সন সড়ক, ডিসি সড়ক, ওমর আলী মাতব্বর সড়ক, মাইজপাড়া সড়ক, পিলখানা সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, সুন্নিয়া মাদ্রাসা সড়ক, মোহাম্মদপুর সড়ক, খতিবের হাট সড়ক। এর মধ্যে অনেকগুলো সড়ক আগে থেকে খারাপ ছিল।
এসব নিয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক পূর্বদেশকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার পর থেকে আমরা সড়ক মেরামতে কাজ করছি। গর্তগুলি প্রাথমিকভাবে ভরাট করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় কার্পেটিংও করা হয়েছে। তবে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায়, কার্পেটিং এর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত সড়ক দৃশ্যমানভাবে মেরামত করা সম্ভব না। যত দেরি হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়ছে। তাই, আমরাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সড়ক যোগযোগ মসৃণ করতে কাজ করছি।’