দ্রুত শুরু হোক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

16

দিন যতই যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট ততই বাড়ছে। সম্প্রতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য তাÐব নিয়ে সরকার যতইনা চিন্তিত ছিল দেশের উপক‚লীয় এলাকার সাধারণ মানুষ নিয়ে তার চেয়ে বেশি ভাবতে হয়েছে সাগর উপক‚ল আর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানকারী দশ লক্ষাধিক আশ্রিত রোহিঙ্গা নিয়ে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিপ্রবাহ যেভাবে মোড় নিয়েছিল তাতে আশঙ্কা করা হয়েছিল যদি কক্সবাজার হয়ে যায় তবে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প সম্পূর্ণ তছনছ হয়ে যেতে পারে। বিধাতা করুণা করেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের তাÐব বা পাহাড়ধস কোনটিই হয়নি, যা হয়েছে টেকনাফ আর সেন্টমার্টিন দ্বীপ হয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী নিবাস রাখাইনে। এছাড়া প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন কোন অঘটন ঘটছেই। রোহিঙ্গাদের আঞ্চলিক সংগঠনসমূহের মধ্যে বিবাদমান গ্রæপের দ্ব›দ্ব, সংঘাত, ডাকাতি, মানুষ ও মাদক পাচার ও অস্ত্র ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই তারা করছেনা। এদের কারণে কক্সবাজার জেলার প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মত ছোট অথচ জনবহুল একটি দেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন অবস্থান মোটেই এবং তাদের লালন-পালন মোটেই সম্ভব নয়। সম্প্রতি জাতিসংঘের অভিবাসন বিভাগের এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দের কাটছাট করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তারা এতে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিসয়টি আবারও সামনে এসেছে। চীন এক্ষেত্রে সরাসরি সহযোগিতা করবে বলে আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশকে। সম্প্রতি এক খবরে প্রকাশ পায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার ফলশ্রæতিতে আগামী জুন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান আশা করছেন, আগামী জুন থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব দরবারে বহুবার মিয়ানমারকে চাপে রাখার জন্য বাংলাদেশ নানা ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করেছে ও করে চলেছে। নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলেছেন বহুবার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার স¤প্রতি জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য সফরে পরিষ্কার জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুতরাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। সুতরাং এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠি চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে চীন-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্তীকরণের উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েছে। এই হাওয়ায় তাল দিচ্ছে জাতিসংঘও। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব স¤প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। সম্প্রতি তারা আবারও অজুহাত খুঁজছে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত নিয়ে। বাংলাদেশ অবশ্যই এ অজুহাতের দোহাই গ্রহণ করবেনা বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের যে সহযোগিতার আশ্বাস তাকে এখনই কাজে লাগাতে হবে। নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপ্তি যেন না বাড়ে আর কোন জটিলতাও যেন সৃষ্টি না হয় সেইদিকে দৃষ্টি রেখে এর একটি রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেয়া পর্যন্ত ক‚টনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখতে হবে।