দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা কঠোর মনিটরিং করতে হবে

11

আর ৯দিন পর পবিত্র রমজান মাসের দিন গণনা শুরু হবে। সিয়াম সাধনার এ মাসে মানুষের ভালো খাওয়ার চাহিদা থেকে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে থাকে। অসাধুদের এ জাতীয় অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সর্বমহলে ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং প্রশাসনের নানা উদ্যোগ দৃশ্যমান হলেও বাস্তবতা হলো, এসব কিছুই কোনকালেই রমজানের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। ফলে রমজান আসলে অসাধুরা দুইমাস আগে থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ শুরু করে, নিত্যপণ্যের বাজারে দামের আগুন জ্বালায়। আর সরকার রমজানের কয়েকদিন আগে মূল্যের ঊর্ধŸমুখী রোধ করার উদ্যোগ নেয়। এবারও রমজান আসার আগেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এক দফা দাম বেড়েছে শবেবরাতের আগে। দ্বিতীয় দফায় বাড়তে শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, বাজারে সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসেরই বাজারে প্রচুর মজুদ আছে। এরপরও বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তির দিকে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, মূল্য পরিস্থিতিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে পবিত্র রমজান মাসে কোনোভাবেই যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বাণিজ্যসচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের রোজায় দেশে অনেক বেশি খাদ্য ও নিত্যপণ্যের মজুদ আছে। জনগণকে অহেতুক উদ্বিগ্ন হয়ে একবারে অনেক বেশি পণ্য না কেনার আহŸান জানিয়েছেন তিনি। এবার সরকারের খাদ্য মজুদের পরিমাণ অনেক বেশি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেছেন, রোজার সময় অবৈধ মজুদ ও বাজারে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। মোবাইল কোর্ট চালু রাখার কথাও বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পণ্য পরিবহনে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঠুনকা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে নিত্যপণ্যসহ সকল প্রকার জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের কোনো উপলক্ষ লাগে না। ধর্মীয় উৎসব এলে তো কথাই নেই। বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও এর কোন দৃশ্যমান বাস্তবতা নেই। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়ায় বলে অভিযোগ আছে। এবারও রোজার আগে ভোগ্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর এবং অন্যান্য ফলমূলের রোজায় চাহিদা বাড়ে, এমন পণ্যের বাড়তি আমদানি হয়েছে। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব নেই। অব্যাহতভাবে মূল্য বেড়েই চলছে।
বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এ প্রবণতা যদি চলতেই থাকে, তাহলে ভোক্তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের বাজারে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কথাও চালু আছে। সুতরাং বাজার নিয়ন্ত্রণের আগে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সিন্ডিকেট নামক অসাধু গোষ্ঠীটি সবসময় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের বলয়ে থাকে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে সিন্ডিকেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা বাজারে মনিটরিং বাড়াতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের জনগণ পণ্যমূল্য নিয়ে দুর্ভোগে আছে। তাই পণ্য যেন ভোক্তাসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সরকারের উচিত কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
সাধারণের কষ্ট লাঘবে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।