দুর্নীতি দুদকের অভিযান

10

মনিরুল ইসলাম মুন্না

অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সন্দ্বীপ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পিডিবি’র চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ১৯ জানুয়ারি দৈনিক পূর্বদেশে ‘সন্দ্বীপে মিটার সংযোগে অতিরিক্ত অর্থ আদায়’ শিরোনামে একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়।
জানতে চাইলে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, ‘সন্দ্বীপ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একটি এনফোর্সমেন্ট টিম গত ২৯ আগস্ট সন্দ্বীপ বিদ্যুৎ অফিসে অভিযান পরিচালনা করে।
জানা যায়, দুদকের সহকারী পরিচালক ইমরান খান অপুর নেতৃত্বে দুই সদস্যের এ টিমের অভিযানের সময় নির্বাহী প্রকৌশলীকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। তার অনুপস্থিতিতে দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও উচ্চমান হিসাব সহকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত দপ্তরে কোনো ধরনের রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না বলে জানান বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। তারা জানান, ‘সব ধরনের বিল-ভাউচারের কপি পিডিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের আঞ্চলিক হিসাব দপ্তরে সংরক্ষণ করা আছে’। এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের কাজের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন শীঘ্রই জমা দেয়া হবে বলে জানান অভিযানে যাওয়া দুদক কর্মকর্তারা। তারা পূর্বদেশকে বলেন, ‘তদন্তে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ফার্নিচার ও স্টোরে মালামাল সরবরাহ বাবদ ১২ লক্ষ টাকার বিল দেয়া হলেও সামান্য কিছু ফার্নিচার ও মালামাল স্টোরে দেখা যায়। তাছাড়া লাইনের বা মিটার নিয়ে যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীরা উপস্থিত না থাকার কারণে বিষয়টি প্রমাণ করা যায়নি। তবে তদন্ত চলমান রয়েছে।’
এর আগে সন্দ্বীপের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবেক আবাসিক প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অনৈতিক কার্যকলাপ ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে। পাশাপাশি গ্রাহকের সাথে প্রতারণার অভিযোগ এনে গত ২৭ মার্চ ‘সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে পিডিবি চেয়ারম্যান বরাবর ৯৯ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ দেয়া হয়।
সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের সভাপতি হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা গণস্বাক্ষরের কপি নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে গেলে তিনি এক মাসের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু পাঁচমাস পার হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।’
তাছাড়াও বিদ্যুতের মিটার সংযোগের জন্য গ্রাহকের থেকে নেয়া অর্থের পুরোটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেননি বলে অভিযোগ করেন চারজন গ্রাহক। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তাদের কাছ থেকে যথাক্রমে চার হাজার, ছয় হাজার ও নয় হাজার টাকা করে নিলেও সরকারের কোষাগারে ৮৮৩ টাকা করে জমা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন ওই প্রকৌশলী। তাছাড়াও ২৩ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করে আত্মসাৎ করেন। একইভাবে সরকার থেকে দেয়া এক হাজার প্রি-পেইড মিটারের প্রতিটি গ্রাহকের কাছে ৬ হাজার টাকা করে বিক্রি করে ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৫ জানুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চল। এতে পওস (পরিচালন ও সংরক্ষণ) সার্কেল চট্টমেট্রো’র (পূর্ব) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরীকে আহব্বায়ক, ফৌজদারহাট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ কাওছার মাছুম ও পওস (পরিচালন ও সংরক্ষণ) সার্কেল চট্টমেট্রো’র (পূর্ব) সহকারী পরিচালক মো. শাহেদ-নুর শাহেদকে সদস্য করা হয়। কিন্তু কমিটি এখনও পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে পিডিবির (পরিচালন ও সংরক্ষণ) সার্কেল চট্টমেট্রো’র (পূর্ব) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি আমাকে কেন ফোন দিছেন? আপনার সাথে আমার কি কথা? আপনাদের সাথে কথা বলার জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন, তার সাথে যত কথা বলবেন’। পরবর্তীতে তার সাথে মুঠোফোনে কথা না বলে কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম পূর্বদেশকে আরও বলেন, ‘সন্দ্বীপে দুদকের অভিযানের বিষয়ে আমি শুনেছি। তারা তদন্ত করে তাদের মত ব্যবস্থা নিবেন। আমাদের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও পাইনি। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’