নিজস্ব প্রতিবেদক
ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে ‘এসাইনমেন্টকৃত’ ব্যাংক এড়িয়ে সরাসরি বিল দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন। অডিট অধিদপ্তরের এমন আপত্তির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে চসিক। এ মামলায় অভিযোগের সত্যতা মেলায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।
একই অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আদালতের বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক এ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভ‚ঁঞার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। এর আগে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্টে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চে জামিন আবেদন করলে জামিন না দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করার আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম জেলা পিপি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে দুদকের মামলায় মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানি হয়নি। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১০ মে দন্ডবিধি ৪০৯/৪২০/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৭৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক কর্মকর্তা, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার তদন্তে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের নাম উঠে আসে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ২০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার এফভিপি ও হেড অব ব্রাঞ্চ ইমতিয়াজ হক বরাবর প্রাতিষ্ঠানিক পত্রে উল্লেখ করেন, পোর্ট কানেক্টিং রোডের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স এন্ড ছালেদ আহমদ (জেবি) এর প্রাপ্য ৫০ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৩ টাকা ওই শাখার নির্ধারিত একাউন্টে জমা দেওয়ার সদয়াদেশ হয়েছে। কিন্তু একাউন্টটি এসাইনমেন্ট করা হলেও বিলের ১৪টি চেকে ২৪ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৭ টাকা (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) সরাসরি ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংককে এড়িয়ে টাকা পেয়ে কাজে উদাসীনতা দেখাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত না করায় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করেছে সিটি করপোরেশন। সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি বাবদ টাকা দাবি করেও আদায় করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে বিভাগীয় মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হলেও স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া চলমান বলে পূর্বদেশকে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।